রাজ্য সরকারে চাকরি পেতে গেলে ব্যক্তিগত সুপারিশ নয়, মেধাই হবে ভিত্তি- এমন নির্দেশ আগেই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, সেই নির্দেশকেই একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একের পর এক ‘দালালচক্র’ সক্রিয় হয়ে উঠছে রাজ্যে। সম্প্রতি, পূর্ব মেদিনীপুরে সরকারি স্তরে গ্রুপ-ডিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে ১৩৫ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে অলোক মাইতির বিরুদ্ধে। এ বার ফের জেলাতেই মধ্য শিক্ষা পর্ষদের ভুয়ো শংসাপত্র দেখিয়ে লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠল সুজিত পয়ড়্যা নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্তকে বীরভূম থেকে গ্রেফতার করে কাঁথিতে নিয়ে আসে রাজ্য পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৯ সালে কাঁথির কলেজ রোডে সিস্টার নিবেদিতা স্বাক্ষরতা মিশন নামে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন সুজিত। সেখানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আড়ালে ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে সরকারি লোগো জাল বানিয়ে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে বিভিন্ন স্কুলে ভোকেশনাল শিক্ষক নিয়োগের ভুয়ো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নিতেন অভিযুক্ত। তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, সুজিতকে কেবল গ্রেফতার করা হলেও অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে এগারো জন সদস্যের নাম।
এমনকি সেই এগারোজনের তালিকায় আছেন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ রাখাল বেরা ও হিমাংশু মান্নাও। জানা গিয়েছে, প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে ভোকেশনাল শিক্ষক হিসেবে কয়েক জনকে নিয়োগও করা হয়। এদিকে, সরকারি লোগো থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষের অবিশ্বাস হয়নি। শুধু তাই নয় স্কুলে কাজে যোগ দেওয়ার পর দু তিনমাস বেতন ও পান ওই নিয়োজিতরা। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতারিত যুবক সৌম্যব্রত পালের অভিযোগ, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তাঁর কাছ থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। বলা হয় তাঁকে সরকারি স্কুলে চাকরি দেওয়া হবে। এমনকী, তাঁর বাড়িতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের লোগো দেওয়া নিয়োগ পত্রও এসে পৌঁছয়। সেই নিয়োগ পত্রে শিক্ষা পর্ষদের যুগ্ম সম্পাদক আশীষ গুপ্তর স্বাক্ষরও রয়েছে। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই একটি সরকারি স্কুলে চাকরি পান তিনি।
কিন্তু, কয়েকমাস বেতন পাওয়ার পর আচমকা বন্ধ হয়ে যায় বেতন। তখনই সন্দেহ হয় তাঁর। খোঁজখবর করতে জানতে পারেন তিনি একা নন, গোটা জেলায় এমনকী জেলার বাইরেও একাধিক মানুষ এই ফাঁদে পড়েছেন। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুপ্রকাশ গিরির কথায়, “এই চক্রের অনেকেই অনেক হেভিওয়েট নেতাদের আত্মজন হয়ে কাজ করেছে। এই তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করা হোক। অপরাধীদের যেন উচিত শাস্তি হয়। কেউ যেন পালাতে না পারে।”