বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে একেবারে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা হল রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর। আজ রাজ্য বিধানসভায় বাজেট নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। কিন্তু, তা করতে গিয়ে শুধুমাত্র সোয়াবিন নিয়েই গোটা ভাষণ দিয়ে বসলেন কৃষ্ণ। নবাগত বিধায়ক কি সোয়াবিন কারখানার মালিক নাকি? গোটা বিধানসভা জুড়ে এই নিয়েই শুরু হয় গুঞ্জন। শাসকদল তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপির বেঞ্চেও চলতে থাকে তুমুল ফিসফাস। শুধু তাই নয়, অধিবেশনের বিরতিতেও এই নিয়ে আলোচনাতেই মেতে ছিল গোটা অ্যাসেম্বলি।
কিন্তু বাজেট ভাষণে হঠাৎ কেন সোয়াবিন উঠে এল? প্রশ্ন উঠতেই জানা গেল এক অন্য কাহিনী। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এই কৃষ্ণ কল্যাণী। রাজ্যে সোয়াবিন চাষের জন্য এর আগেও একাধিকবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা প্রশাসনের বৈঠকে রাজ্যে সোয়াবিন চাষে উৎসাহ দিতে স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্যও রাখেন কৃষ্ণ। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর নজর কাড়তেও সমর্থ হন তিনি। সেই সময় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা কৃষ্ণর বক্তব্য শুনে বলেছিলেন, এর আগে দক্ষিণবঙ্গে সোয়াবিন চাষ সফল হয়নি।
তার পাল্টা কৃষ্ণ পাল্টা রাজীবকে বলেন, তাঁর স্থির বিশ্বাস উত্তরবঙ্গে সফল হবে। এরপর শুধু কথায় আটকে না থেকে কাগজে-কলমে পরীক্ষামূলক চাষও করেন কৃষ্ণ। বিহারের বেগুসরাই থেকে দু’জন কৃষক নিয়ে এসে রায়গঞ্জে নিজের ফ্যাক্টরির সামনের জমিতে সোয়াবিন চাষ করেন কৃষ্ণ। আর তাতেই মেলে সাফল্য। সেই রিপোর্ট নিয়ে তিনি হাজির হন নবান্নে, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের কাছে। কৃষ্ণর পরীক্ষা-নিরীক্ষা খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানীরাও যান রায়গঞ্জে।
এরপর চলে আসে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়ে জয়লাভও করেন কৃষ্ণ। আর জিতে এসে জীবনের প্রথম ভাষণেই সেই সোয়াবিনকেই হাতিয়ার করলেন তিনি। আসলে সোয়াবিনই কৃষ্ণের ধ্যান ও জ্ঞান। তাই গোটা বাজেটের মধ্যে অর্গানিক ফার্মিং-এ কম বরাদ্দ নিয়ে বলতে ওঠেন কৃষ্ণ। কিন্তু তাঁর ভাষণের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল শুধু সোয়াবিন আর সোয়াবিন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই কটাক্ষের শিকার হয়েছেন তিনি।