শুধুমাত্র কলকাতা বা বাংলা নয়, ধৃত ভুয়ো আইনজীবী সনাতন রায়চৌধুরী বাংলাদেশেও নিজের জালিয়াতির জাল ছড়িয়েছিল। বিপুল টাকা প্রতারণার দায়ে বাংলাদেশেও সনাতনের সাগরেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রতারিত বাংলাদেশি নাগরিকের নাম সোহেল খান। তাঁর অভিযোগ, সনাতনের সহকারী মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশে গিয়েও একই ধরনের প্রতারণার কাজ করতেন।
প্রাথমিকভাবে একটি সম্পত্তি জালিয়াতির মামলায় গড়িয়াহাট থেকে সনাতনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করার পর থেকেই একের পর এক হাড় হিম করা তথ্য প্রকাশ্যে উঠে আসতে শুরু করে। সবার প্রথম জানা যায়, সনাতন হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হওয়ার ভুয়ো দাবি এতদিন করেছিলেন। সনাতনকে জেরা করে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, নিজস্ব উদ্যোগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও শুরু করেছিলেন তিনি। আর্থিকভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সবরকম দেখাশোনা ও চিকিৎসার ভার বহন করত সেই সংস্থা।
তবে চমকপ্রদ বিষয় হল, যে এনজিও তিনি খুলেছিলেন, তার হেড কোয়ার্টার ব্রিটেনে অবস্থিত বলে দাবি করতেন সনাতন। সেই সংস্থা চালাতে একাধিক ব্যক্তিকে সেখানে নিয়োগ করেন। সদস্যপদ বাবদ প্রত্যেকের কাছে থেকে সনাতন ১০০০ টাকা করেও উসুল করেন বলে অভিযোগ। অনুদান বাবদ কখনও ৫০ হাজার, কখনও ২ লাখ, কখনও বা ৫ লাখ টাকাও নেওয়া হত ওই এনজিও-র জন্য। এবং পুরো কাজটাই করতেন সনাতনের এক সাগরেদ। যাঁর আসল নাম বিশ্বজিৎ সাঁতরা, কিন্তু তা ভাঁড়িয়ে তিনি সংগ্রাম মিত্র নামটি ব্যবহার করতেন।
এই বিশ্বজিৎ সাঁতরাই জালিয়াতির জাল ছড়াতে পাড়ি দেয় বাংলাদেশে। সেখানে গিয়েও একইভাবে প্রভাবশালী এবং সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষদের সঙ্গে আলাপ জমানো শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল, কলকাতার মতোই আরেকটি এনজিও খুলে সেখান থেকে টাকা আমদানি করা। সেই মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম দেখিয়ে সদস্যপদ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১,৫০০ টাকা করে নেন। কিন্তু যে সংস্থার নাম দেখানো হয়েছিল ব্রিটেনে তার কোনও অস্তিত্ব না থাকায় সন্দেহ হয় প্রতারিতদের। তারপরই স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়।