রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের রণডঙ্কা বাজতেই নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার প্রতিটি প্রান্তে ভোটের প্রচারে গিয়ে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা। তারমধ্যেই একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের টাকা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবেন। এবার নিজের দেওয়া সেই কথা রাখলেন তিনি। শপথ নেওয়ার এক মাসের মধ্যেই ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে ভাতা বাড়িয়ে বার্ষিক ১০ হাজার টাকা করেছেন তিনি।
গত ১৭ জুন নবান্ন থেকে বর্ধিত ভাতার প্রকল্পটি ঘোষণা করেন মমতা। প্রথম দিনেই প্রায় ১০ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছিল প্রথম কিস্তির ২৯০ কোটি টাকা। মাত্র ১৫ দিনেই গোটা রাজ্যে ৬২ লক্ষ কৃষকের ঘরে পৌঁছে গিয়েছে প্রথম কিস্তির টাকা। এত অল্প সময়ে, এত বেশি সংখ্যক মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রকল্পের টাকা পৌঁছে দেওয়া এক বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা। প্রথম কিস্তিতে মোট ১৮০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এই বছরের শেষের দিকে কৃষকদের ঘরে দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও পৌঁছে যাবে বলে আশা করছে নবান্ন।
আগে কৃষকরা বছরে পাঁচ হাজার টাকা করে এই প্রকল্পে ভাতা পেতেন। এবার সেটা দশ হাজার করা হয়েছে। যাদের জমি এক একরের কম তারাও এই প্রকল্পে বছরে দু’হাজার টাকা পেত। এবার সেটা বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হয়েছে। কেন্দ্রের যে কৃষক ভাতা প্রকল্প রয়েছে, সেখানে যেসব কৃষকের দু’একরের বেশি জমি রয়েছে, তারাই একমাত্র ভাতা পায়। তবে রাজ্য কাউকে বাদ দেয়নি। সমস্ত কৃষককেই তার ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের আওতায় এনেছে সরকার। এমনকী, যেসব খেতমজুর, বর্গাদারদের সামান্য জমি রয়েছে, তাঁদেরও এই প্রকল্পে যুক্ত করার ব্যবস্থা করেছে। এই প্রকল্পে বার্ষিক ভাতা ছাড়াও কৃষকদের দু’লক্ষ টাকার জীবনবিমা করে দেওয়া হয়। প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর রাজ্যের ২৮ হাজার কৃষক পরিবার মৃত্যুকালীন বিমার সুবিধা পেয়েছে।
গত ১০ বছরে কৃষকদের সাহায্যার্থে নানারকম প্রকল্প নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাষের জমি নষ্ট হয়েছে এমন ১ কোটি ২০ লক্ষ পরিবারকে গত এক দশকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে রাজ্য। তবে, ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। বিশেষ করে এই ভয়ঙ্কর অতিমারীর সময়ে কৃষকদের বছরে ১০ হাজার টাকা ভাতা গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙা করবে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। গত ১৫ দিনে যে ১৮০০ কোটি টাকা রাজ্য কোষাগার থেকে ৬২ লক্ষ কৃষকের ঘরে পৌঁছেছে, সেই টাকা ঘুরপথে এসে পৌঁছবে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিতে। গ্রামাঞ্চলে ৬২ লক্ষ পরিবারের হাত ধরে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ঘটলে তা সামগ্রিক অর্থনীতিকেই পুষ্ট করবে।