পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দিল্লী সীমানায় চলা কৃষক আন্দোলনকেই ‘মোদী বিরোধী মঞ্চ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই ‘মমতা দিদির দূত’ হয়েই মঙ্গলবার দিল্লী-উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর সীমানায় হাজির হন দলের সর্বভারতীয় নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। বৈঠক করেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের সঙ্গে। তারপর থেকেই কৃষক আন্দোলনকে মোদী বিরোধী শক্তির ঐক্যবদ্ধ মঞ্চে পরিণত করার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের তিন বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত বছরের ২৬শে নভেম্বর থেকে ঠায় অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের একাধিক সংগঠন। মোদী সরকারের কাছে এমএসপি (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) সংক্রান্ত আইন আনার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। কেন্দ্র অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আইন বাতিল করা হবে না। যদিও, সরকারের কথায় আন্দোলন থেকে সরতে নারাজ কৃষকরা। একই দাবিতে সরব তৃণমূল সহ প্রায় সমস্ত বিজেপি বিরোধী দল। আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ সহ ছয় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোট। তাই এখন থেকেই নরেন্দ্র মোদীকে মসনদচ্যুত করার প্রস্তুতি হিসেবে কৃষক আন্দোলনকে অন্যতম মঞ্চ হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছে বিরোধীরা। রাজনৈতিক মহলের মত, এই উদ্যোগে অন্যদের চেয়ে ঢের এগিয়ে মমতা।
এদিন গাজিপুর সীমানায় যশোবন্ত হাজির হওয়ায় খুশির সুর ছিল কৃষক নেতাদের গলায়। একসময় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেও গত কয়েক বছর ধরেই নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার যশবন্ত। তাঁর সঙ্গে বৈঠক শেষে রাকেশ টিকায়েত বলেন, “নবান্নে গিয়ে আমরা মমতা দিদির সঙ্গে দেখা করে এসেছি। তিনি যেমন আমাদের কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করছেন, আমরাও তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোদী বিরোধী মুখ হিসেবে জাতীয় স্তরে তুলে ধরার পক্ষে।” বৈঠক শেষে যশবন্ত সিনহা বলেন, “কৃষক আন্দোলনে তৃণমূলের সমর্থন যে অব্যাহত, বিক্ষোভরত চাষিদের পাশে থেকে তা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছি আমরা। তৃণমূল যেভাবে মোদী বিরোধীদের একত্রিত করতে চায়, একইভাবে কৃষকরাও চান দেশ থেকে মোদীকে সরাতে। কৃষকরা আমাদের মোদী বিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সহমত।”
উল্লেখ্য, এর আগে প্রায় একইভাবে কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে দিল্লি সীমানায় হাজির হয়েছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন সহ তৃণমূলের একাধিক সাংসদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষকদরদী অবস্থানও সেখানে তুলে ধরেন তাঁরা। সামনেই শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। সেখানে যোগ দিতে দিল্লীতে আসা তৃণমূল সাংসদরা ফের আন্দোলনকে শক্তি জোগাতে যাবেন। অন্যদিকে, কৃষকরাও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় হচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার ভোটে বিজেপি বিরোধী সমর্থন তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। সংযুক্ত কিষান মোর্চা বলেছে, “মোদী সরকার ইগোয় ভুগছে। ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখছে। তাই যে অন্নদাতারা দেশের জন্য রোদে পুড়ে, জলে ভিজে সোনার ফসল ফলান, তাঁদেরই অবজ্ঞা করছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফল ভুগতেই হবে।”