‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যের পরেই দক্ষিণ এবং উত্তরবঙ্গে ফের মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’রা। দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলমহল এলাকায় ‘গ্রেটার ঝাড়খণ্ড’ আন্দোলনকে ফের চাগিয়ে তোলার তোড়জোড় যেমন শুরু হয়েছে, ঠিক তেমনই উত্তরবঙ্গে চলছে পৃথক কামতাপুর এবং গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য গড়ার স্বপ্ন ফেরি। এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝাড় ও সুন্দরগড় জেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য ‘গ্রেটার ঝাড়খণ্ড’ আদায়ের আন্দোলনে নতুন করে যাবতীয় প্রস্তুতির খবর এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে। তাঁরা বলছেন, এই আন্দোলনের সলতে যেমন পাকছে এ রাজ্যের জঙ্গলমহল এলাকায়, তেমনই মদত আসছে ঝাড়খণ্ড থেকেও। উত্তরবঙ্গে কামতাপুর বা গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য আদায়ের আন্দোলন ফের শুরু করতে কার্যত একছাতার নীচে চলে এসেছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন এবং কামতাপুর পিপলস পার্টির দু’টি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতর জেনেছে, নতুন করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সম্পূর্ণ মদত রয়েছে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) প্রধান জীবন সিংহের। তাঁর নির্দেশে অসমের কোকরাঝাড়, ধুবড়ি, বঙ্গাইগাঁও এবং চিরাংয়ে আন্দোলন তহবিল গড়তে ‘চাঁদা’ তোলার কাজ চলছে। ইদানীং জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের আসাম লাগোয়া অংশে কাজ শুরু করেছে কেএলও-র কয়েকটি ‘স্লিপার সেল’। অসমে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা হুমকি পোস্টার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার বরাত দেওয়া হয়েছে স্লিপার সেলকে। জনমানসে কেএলও ভীতি বাড়ানোর জন্যই এই পন্থা। গত ২০১৮ সালে শিরোনামে আসা নতুন জঙ্গী সংগঠন ‘গ্রেটার কোচবিহার লিবারেশন অর্গানাইজেশন’-এর (জিসিএলও) ক্যাডাররাও পৃথক রাজ্য গঠনের এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। গত কয়েকমাস ধরে এই সংগঠনের স্বঘোষিত প্রধান নির্মল রায় এবং তাঁর সহযোগীরা সোশ্যাল মিডিয়া ‘ইউটিউবে’ খোলাখুলিভাবে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথক রাজ্য গড়ার হুমকি দিচ্ছে।
২০০০ সাল থেকে পৃথক রাজ্য ‘গ্রেটার ঝাড়খণ্ড’ আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়েছিল জঙ্গলমহলে। এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন আদিবাসী কুর্মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো। তিনি বলেন, ‘পৃথক রাজ্যের দাবি আমাদের প্রাণের আন্দোলন। এই দাবি থেকে কখনও সরব না। তবে এখন কারা এই আন্দোলন করতে চাইছে জানি না, তবে আগামী বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বর মাসে মহাজমায়েত ডেকে এই দাবিকে সামনে রেখে মানুষের রায় নেব। তারপরই শুরু হবে আন্দোলন।’