কেন্দ্র থেকে একের পর এক নেতা এসে দাবি করেছিলেন, ২০০-র বেশি আসন পাবে বিজেপি। তবে ২ মে সমস্ত হিসাব ওলট পালট করে রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ফের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে এ পর্যন্ত বিবিধ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সর্বমোট ৯টি চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, তার উত্তর দেওয়া তো দূর, একটা চিঠিরও প্রাপ্তি স্বীকার করেনি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। এই নিয়ে নবান্ন যারপরনাই ক্ষুব্ধ বলে জানা গিয়েছে।
গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টিকা, রেমডিসিভির ও কোভিডের পথ্য, অক্সিজেন ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের জোগান নিয়ে চিঠি লিখেছিলেন মমতা। পরের দিন আর একটি চিঠি দেন। তার বিষয় ছিল, প্রধানমন্ত্রী কিষান যোজনায় বকেয়া টাকা মেটানো। এরপর অক্সিজেন জোগানের দাবিতে ৭ মে আরও একটি চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৯ মে ফের চিঠি লেখেন মমতা। সেই চিঠির বিষয় ছিল, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারকে সাহায্য করার জন্য অক্সিজেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার, কনসেনট্রেটর, ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্ক ও ওষুধ দিতে চাইছে। ওই সব জিনিসের উপরে কর প্রত্যাহার করা হোক।
টিকার ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে টিকা আমদানির পরামর্শ দিয়ে ১২ মে ফের একবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই চিঠিতে রাজ্যে টিকা কারখানার জন্য জমি দেওয়ার প্রস্তাবও দেন। ১৪ মে আরও একবার চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্যের হাসপাতালগুলির জন্য টালবাহানার পর ৭০টি অক্সিজেন প্লান্ট বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। এসেছে ৪টি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান মমতা। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের অবিলম্বে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি তুলে ২০ মে চিঠি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই জন্য কমপক্ষে ২০ লক্ষ ডোজ টিকা পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
৩১ মে-র চিঠিতে দুটি বিষয় উল্লেখ করেন মমতা। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লীতে বদলি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। লেখেন, এটা আইনবিরোধী ও নজিরবিহীন। অসাংবিধানিকভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই বদলি করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আর্জি করেন মমতা। চিঠির দ্বিতীয় অংশে ২৮ মে কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ নিয়ে সবিস্তার লিখেছেন তিনি। শেষ চিঠি পাঠান ২৪ জুন। মমতা লেখেন, “কোভ্যাক্সিন টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিদেশে পড়তে যাওয়া পড়ুয়ারা। তাই কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন পাইয়ে দিতে তৎপর হোন প্রধানমন্ত্রী।”
গত ৫ মে থেকে এই ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ৯টি চিঠি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের খবর, একটাও চিঠির উত্তর আসেনি। এমনকি প্রাপ্তি স্বীকারও করেনি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। কেন্দ্রের এমন আচরণে প্রবল ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটে হারে মেনে নিতে পারছে না বিজেপি। তাই সেই রাগেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে প্রশাসনিক কাজকর্মে।