২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৯ মাসে উত্তরপ্রদেশের ২৪টি জেলায় যে সংখ্যক মানুষ করোনায় মারা গেছেন তা সরকারি পরিসংখ্যানের থেকে ৪৩ গুণ বেশি। একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকের দাখিল করা আরটিআই আবেদনের মাধ্যমে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
উত্তরপ্রদেশের ৭৫টি জেলার মধ্যে ২৪টি জেলায় ২০২০ সালের জুন, জুলাই, আগস্ট এবং অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ করোনায় মারা গেছেন। করোনার প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়ার সময় ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ এর মধ্যে এই জেলাগুলিতে সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় ১০-৩৩৫ গুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। যদিও বিজেপি বলেছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ খুব ভালো ভাবে উত্তরপ্রদেশের করোনা পরিস্থিতি সামলেছেন।
আরটিআই এর মাধ্যমে জানা গেছে, ১ জুলাই ২০১৯ থেকে ৩১ মার্চ ২০২০-র মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ওই ২৪ জেলায় ১,৭৮,০০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরের বছর এই একই সময়, অর্থাৎ ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১-র মধ্যে মারা গেছেন ৩,৭৫,০০০ জন। যা আগের বছরের তুলনায় ১১০% বেশি।
যদিও সরকারি কোভিড পরিসংখ্যান অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা অনেকটাই কম। তথ্যে এই পার্থক্য হওয়ার অন্যতম কারণ দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় মৃত্যুর পরিসংখ্যান গোপন করা। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োফিজিক্সের অধ্যাপক গৌতম মেনন এবিষয়ে বলেন, ‘ভারতে করোনায় প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে অনেকটাই বেশি। এর মূল কারণ বেশিরভাগ ভারতীয়ই বাড়িতে মারা গেছেন। এদের মধ্যে মাত্র ২০% মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।’
গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসা থেকে শুরু করে নদীর পারে মৃতদেহ পুঁতে দেওয়ার ঘটনায় বিরোধীরা যোগীকে দোষারোপ করলেও এই মৃত্যুগুলি সরকারি নথিতে যুক্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীর কাছে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলায় ১ জুলাই ২০১৯ থেকে ১ মার্চ ২০২০-র মধ্যে ১৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, পরের বছর ওই একই সময়ে ১৯,৭০০ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ ১,১৩৬% বেশি মৃত্যু হয়েছে করোনার সময়। কিন্তু প্রশাসনের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে ওই সময় মাত্র ৯২ জনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (সিআরএস) যেহেতু সকলের জন্ম এবং মৃত্যুর হিসেব রাখে তাই এই ওয়েবসাইট থেকেই একমাত্র প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যেতে পারে। রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশ মোট মৃত্যুর মাত্র ৬৩.৩% নথিভুক্ত করেছে। সহজভাবে বলতে গেলে প্রতি ১০টি মৃত্যুতে ৪ টি নথিভুক্ত করেনি উত্তরপ্রদেশ। এছাড়াও ৩১% ক্ষেত্রে মৃত্যুর ১ মাস পরে তা নথিভুক্ত হয়েছে। গৌতম মেনন বলেন, ‘ভারতে প্রশাসনিক পরিসংখ্যানের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২.২ গুণ বেশি হতে পারে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’