বাইরে বোর্ডে ফলাও করে লেখা জেরক্সের দোকান। যদিও সেই দোকানের আড়ালেই রমরমিয়ে চলছিল রেলের ই-টিকিটের অবৈধ কারবার। রেলের চোখে ধুলো দিয়ে এই কারবার চালাচ্ছিলেন খোদ বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। কাঁকসা থানার ১১মাইল এলাকায় মঙ্গলবার আরপিএফের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে ওই বিজেপি নেতা রাজীব রায়কে গ্রেফতার করতেই শোরাগোল পড়ে যায়। তাঁর জেরক্সের দোকান থেকে কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউ, প্রিন্টার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা আরপিএফের এই অভিযান নিয়ে সাপে ছুঁচো গেলার অবস্থা বিজেপি নেতৃত্বের। রাজ্যপুলিস গ্রেফতার করলে ফাঁসানোর তত্ত্ব খাড়া করা সহজ ছিল তাদের। কিন্তু রেলপুলিসের নামে সেই তকমা সাঁটতে পারছে না। যদিও তারা এটাকে ছোট ঘটনা হিসেবেই দেখাতে চেয়েছে। এনিয়ে অবশ্য সুর চড়িয়েছে তৃণমূল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসা ১ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি রাজীববাবুর ১১মাইল রাধামোহনপুরে ‘রায় জেরক্স’ নামে একটি দোকান রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই নানা জেরক্সের কাজ করার পাশাপাশি রেলের টিকিট কাটা হতো। আইআরসিটিসির ওয়েবসাইট থেকে ই-টিকিট কেটে দিয়ে বাড়তি টাকা নেওয়া হতো। মঙ্গলবার পানাগড় স্টেশনের আরপিএফের একটি বড় টিম আচমকা তাঁর জেরক্সের দোকানে অভিযান চালায়। তখনই তাদের নজরে আসে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত টিকিট কাটার জন্য খোলা অ্যাকাউন্ট কর্মাসিয়াল কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমে ই-টিকিট কাটার জন্য তাঁর বৈধ এজেন্ট আইডি ছিল। কিন্তু, গতবছরই সেই মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এজেন্ট আইডি নবীকরণ না করিয়েই অবৈধ উপায়ে এই কারবার চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। জেরক্সের দোকান থেকে অবৈধভাবে কাটা বেশকিছু টিকিটও পাওয়া গিয়েছে। কম্পিউটার খতিয়ে দেখে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে বেশকিছু টিকিট কাটার পাশাপাশি বাতিলও করা হয়েছে। এরপরই ওই বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিনের ঘটনায় পরই ব্লকজুড়ে আলোড়ন পড়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের অনিময়ের অভিযোগ তুলে বারবার সুর চড়িয়েছিলেন রাজীববাবু। এখন নিজেই এতবড় অনিময়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় বিজেপির মুখ পুড়েছে বলেই দাবি এলাকাবাসীর। মণ্ডল সভাপতির অবৈধ কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও বিষয়টি হালকাভাবে দেখছেন বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি রমন শর্মা। তিনি বলেন, ওঁর আগে বৈধ এজেন্ট আইডি ছিল। এটা এমন কিছু বড় বিষয় নয়। এটাও প্রমাণিত হল যে, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা নিরপেক্ষভাবে কাজ করে।
যদিও কাঁকসার তৃণমূলব্লক সভাপতি দেবদাস বক্সি বলেন, এটাই বিজেপির চরিত্র। ভোটের সময় দুনীর্তি নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। এখন প্রমাণ হল নিজেরাই অবৈধ কারবারে যুক্ত। আমরা ওই নেতার উপযুক্ত শাস্তি চাই।