রামলালার মন্দির নির্মাণের জন্য মুক্তহস্তে দান করেছেন রামভক্তরা। আর তার ফলে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি চাঁদা জমা পড়েছে রামমন্দির নির্মাণ খাতে। কিন্তু সেই টাকা ঘুরপথে বিজেপিনেতাদের পকেটে ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠছে। শুধু তাই নয়, ওই জমি নাকি সরকারি জমি, যা বিক্রির প্রশ্নই ওঠে না। এবার এমনই গুরুতর অভিযোগ সামনে এল। শুধু বিরোধী শিবির নয়, মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং গেরুয়া শিবিরের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে রাম জন্মভূমির জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন অযোধ্যার দশরথ গদ্দি মন্দিরের মহন্ত ব্রিজমোহন দাস স্বয়ং। তাঁর কথায়, ‘ভগবান রামের মন্দির নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা বাবরের চেয়েও অধম।’
মন্দির নির্মাণের জন্য রাম জন্মভূমি সংলগ্ন একটি জমির লেনদেন নিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে বিগত কয়েক দিন ধরে সরব বিরোধী শিবির। জানা গিয়েছে, ১৮ মে প্রথম দুই ব্যক্তির মধ্যে সংশ্লিষ্ট জমিটির লেনদেন হয় ২ কোটি টাকায়। স্ট্যাম্প পেপারে সইসাবুদ করে সেই লেনদেন সম্পূর্ণ হওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে জমিটি আবার নয়া মালিকের কাছ থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকায় কিনে নেয় রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাইয়ের উপস্থিতিতে গোটা বিষয়টি সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ জমিটি ২ কোটি টাকায় কিনে, ১০ মিনিটের মধ্যে সেটি বিক্রি করে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা লাভ করেন এক ব্যক্তি।
এই জমি বিতর্কে নাম জড়িয়ে গিয়েছে অযোধ্যার মেয়র তথা বিজেপি নেতা ঋষিকেশ উপাধ্যায়ের। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাম জন্মভূমি সংলগ্ন ১৩৫ নম্বর ক্রমিকের যে বিস্তীর্ণ জমি রয়েছে, তার ৮৯০ বর্গ মিটার ২০ লক্ষ টাকায় মহন্ত দেবেন্দ্রপ্রসাদ আচার্যর কাছ থেকে কিনে নেন ঋষিকেশের ভাইপো দীপ নারায়ণ। সেই সময় জমিটির বাজার মূল্য ছিল ৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এর ৩ মাসের মাথায়, মে মাসে ওই জমিটিই রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রকে আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু ওই ৮৯০ বর্গ মিটার জমিটি লেনদেনের আওতায় পড়েই না বলে অভিযোগ।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, অযোধ্যা জেলার ভূমি রাজস্ব দফতরের নথিতে বলা আছে, ভোগ-দখলের অধিকারের আওতায় জমিটি বহু বছর ধরে অনেক হাত ঘুরেছে। কিন্তু সেটি বিক্রির অধিকার দেওয়া হয়নি কাউকেই। অযোধ্যার ভূমি রাজস্ব দফতরের নথি বলছে, ১৪২৫ কৃষিবর্ষ অনুযায়ী রামজন্মভূমি সংলগ্ন ১৩৫, ১৪২, ১২৯ এবং ২০১ ক্রমিকের বিস্তীর্ণ জমির মালিকানা সরকারের হাতে রয়েছে। কৃষিকার্য ছাড়া অন্য কাজে বহু বছর ধরে সেগুলি লিজে দেওয়া রয়েছে। বিভিন্ন সময় তা হাতবদল হয়েছে। রামকোটের ‘বড়া স্থান’-এর মহন্ত বিশ্বনাথ প্রসাদাচার্যকে ১৩৫ নম্বর জমির একটি অংশ লিজ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তাতেও সাফ লেখা ছিল, তিনি শুধু ভোগদখল করতে পারবেন। জমির মালিকানা পাবেন না। বিশ্বনাথ কবে মারা যান, সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই ভূমি-রাজস্ব দফতরের কাছে। তবে বিশ্বনাথের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি দেবেন্দ্র প্রসাদাচার্যের নামে লিজটি হস্তান্তরিত হয়। তাঁর কাছ থেকেই জমিটি ২০ লক্ষ টাকায় কিনে নেন দীপ নারায়ণ। সংবাদমাধ্যমে দেবেন্দ্র প্রসাদাচার্য জানিয়েছেন, ‘জমিটি রামমন্দির নির্মাণের জন্য দিয়ে দিতে হবে বলে বেশ কিছু দিন ধরে মেয়র জোরাজুরি করছিলেন। সরকারি জমি থেকে যা পাওয়া যায় তাই ভাল। এই ভেবেই জমিটি বিক্রি করে দিই।’
দেবেন্দ্র প্রসাদাচার্য আরও জানিয়েছেন, দীপ নারায়ণকে ২০ লক্ষ টাকায় ৮৯০ বর্গ মিটারের জমিটি বিক্রি করেন তিনি। ১৩৫ নম্বর ক্রমিকের ৩৭০ বর্গ মিটারের অন্য একটি জমি জগদীশ প্রসাদকে ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন। অর্থাৎ লিজে নেওয়া সরকারি জমি বিক্রি করে ৩০ লক্ষ টাকা লাভ করেন তিনি। অন্য দিকে, সেই জমিই কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে কেনে রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র। এই টাকার পুরোটাই মেয়রের ভাইপোর পকেটে ঢোকে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। এখানেই শেষ নয়। কারণ জমিটির লিজ নিয়েও কম জটিলতা নেই।
দশরথ গদ্দির মহন্ত ব্রিজমোহন দাসের দাবি, ১৩৫ ক্রমিকের ১ হাজার ২৫৫ বর্গ মিটার জমি বহু বছর ধরেই দেখভাল করে আসছেন তিনি। মহন্ত বিশ্বনাথ প্রসাদাচার্যর শিষ্য সরকারি ওই জমির ভোগদখলে ছিলেন। তাঁর গুরু রাম আশ্রয়দাসও ওই লিজের অংশ ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্র প্রসাদাচার্য এবং তাঁর হাতে জমির লিজ ওঠে। শুধু নিজের অংশটুকুই নয়, দেবেন্দ্র প্রসাদাচার্যের অংশের জমিরও দেখভাল তিনিই করতেন বলে জানিয়েছেন ব্রিজমোহন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তাঁকে জমিটি খালি করতে নির্দেশ দেন অযোধ্যার সহকারী জেলাশাসক সন্তোষকুমার সিংহ। জমিটি মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে তাঁকে জানান সন্তোষ।
ব্রিজমোহনের দাবি, রামের ভক্ত তিনি।…