কোভিডের আবহেও স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছে বাংলার দু’লক্ষ পরিবার। সৌজন্যে রাজ্য সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। পঞ্চায়েত দপ্তরের বহুমুখী প্রকল্পের হাত ধরে আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন কোচবিহার থেকে কলকাতার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তাঁরা উৎপাদন করছেন বিভিন্ন পণ্য এবং তা বিক্রি করছে পঞ্চায়েত দপ্তর। তার দৌলতেই রাজ্যের প্রায় দু’লক্ষ পরিবারের মহিলা সদস্যরা এখনও প্রতিমাসে কমপক্ষে চার হাজার টাকা আয় করতে পারছেন। তাঁদের তৈরি মশলা, চাল, ডাল, আনাজ, এমনকী প্রতিপালন করা মুরগির মাংস বিক্রি করে পরিবারগুলির মুখে হাসি ফুটিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তরের অধীনস্ত সুংসহত এলাকা উন্নয়ন পর্ষদ (সিএডিসি)।
ধারাবাহিক সংকটময় পরিস্থিতিতেও স্বচ্ছতার সঙ্গে আয়ের সুযোগ পেয়ে তাই সরকারকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাঁকুড়ার তমসা মজুমদার, হুগলীর নাসরিন লায়লা বা মালদহের জ্যোৎস্না বেগমরা। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ছাড়া কোনও কিছুই সম্ভব হত না। তমসাদেবী বলেন, “মুরগি-খাসি থেকে বড়ি-মশলা, ঘি আমরা তৈরি করে দিয়েছি সিএডিসিকে। তারাই সেসব বিক্রি করেছে। আর আমাদের গোষ্ঠীর মেয়েরা এই লকডাউনেও দু’টি পয়সার মুখ দেখেছে। সরকারের পরিকল্পনাই আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়েছে।” একই মত নাসরিন লায়লার। তিনি বলেন, “সব্জি থেকে মুরগির মাংস—সবই উৎপাদন করি আমরা। কিন্তু বিক্রি করব কিভাবে? লকডাউনে আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। তাতে অন্তত না খেতে পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।” এই মডেলে আগামী দিনে আরও লাভের মুখ দেখতে আগ্রহী স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি।
এমন সাফল্যে খুশি পঞ্চায়েত দপ্তরের বিশেষ সচিব তথা সিএডিসি কর্তা সৌম্যজিৎ দাস। জানিয়েছেন, “আমাদের ১৯ হাজার ৭০০ স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। তারাই মাছ থেকে ডিম, মাংস থেকে মশলা, সব্জি থেকে ফল সরবরাহ করেছে। সরবরাহ করেছে চারা, বীজ। সেসব পণ্যই আমরা নানাভাবে বিক্রি করে গোষ্ঠীদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছি। লকডাউনের এই কঠিন পর্বে গ্রামীণ মহিলারা লাভবান হয়েছেন উৎপাদন করে আর শহুরে মানুষ হাতের কাছে পেয়েছেন উন্নত গুণমানের পণ্য।”
উল্লেখ্য, সিএডিসি সূত্র অনুযায়ী গত এক বছরে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার ব্যবসা করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকাই এসেছে সরাসরি পণ্য বিক্রি করে। উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছে বীজ, চারা, ফল, চাল-ডাল, মশলা। নদীয়া, বাঁকুড়া দিয়েছে পনির, মাছ, খাসি-মুরগির মাংস, ঘি ও মশলা। মাছ, সব্জি, মাংস গিয়েছে হাওড়া-হুগলি থেকে। লকডাউন পর্বে যখন অন্যদের কাছে পণ্য বিক্রির সুযোগ কমেছে, তখন সিএডিসি বাড়ি বাড়ি পণ্য সরবরাহ করেছে। রান্না করা খাবারের হোম ডেলিভারি পর্যন্ত দিয়েছে। তাতেই কপাল খুলেছে গোষ্ঠীর মহিলাদের। প্রতিটি গোষ্ঠীতে অন্তত দশজন করে মহিলা সদস্য আছেন। প্রত্যেকের হাতেই এসেছে সংসার চালানোর টাকা। অর্থাৎ, লাভবান হয়েছে প্রায় দু’লক্ষ পরিবার। গোটা পরিকল্পনা তৈরি করে এভাবেই উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের মহিলাদের কাছে আর্থিক নিশ্চয়তা পৌঁছে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।