ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছে দোষারোপের পালা। প্রকাশ্যে কলহে জড়িয়ে পড়ছেন দলের নেতারা। সামনে চলে আসছে তাঁদের মতানৈক্যের কথা। এরই মধ্যে জন বার্লা, সৌমিত্র খাঁদের বাংলা ভাগের প্রস্তাব ঘিরে নতুন করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দলে। ঘরোয়া আলোচনায় অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। ওই অংশের বক্তব্য, এর ফলে দার্জিলিংকে পৃথক রাজ্য করার দাবি জোরদার হবে, বিজেপি যা সমর্থন করেনি। এছাড়া কামতাপুরী রাজ্যের দাবিও ওঠা অসম্ভব নয়। এই ভাবে রাজ্যের নানা প্রান্তে পৃথক রাজ্যের দাবি উঠতে থাকলে বিজেপি বাংলার মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ও বাঙালির স্বার্থরক্ষার কথা বলেই শেষ পর্যন্ত বাজিমাৎ করেছেন।
প্রসঙ্গত, পৃথক রাজ্য নিয়ে চলতি পর্বের শুরুটা করেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। বাংলা ভাগের দাবি সোচ্চারে জানিয়ে বলেছিলেন, উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা প্রয়োজন। বার্লার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন গতকাল বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ আবার রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলকে আলাদা রাজ্য করার দাবি তুলেছেন। এমনিতে সৌমিত্রর আলটপকা কথা বলার অভ্যেস রয়েছে। কিন্তু জন বার্লার পর তাঁর মন্তব্যকে অনেকেই ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখতে চাইছেন। যা নিয়ে সংশয় ও বিভ্রান্তি দুই-ই তৈরি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। বার্লার ওই মন্তব্যের পর বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলা ভাগের দাবি বিজেপি করছে না। যাঁরা এই দাবি তুলছেন তাঁদের ব্যক্তিগত মত। দল এই বক্তব্যকে অনুমোদন করে না।
তবে পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, বিজেপি একটা রেজিমেন্টেড দল। সেই দলের দুজন সাংসদ ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে বাংলাকে টুকরো করার পক্ষে সওয়াল করছেন আর দল কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? জিতেন্দ্র তিওয়াড়ির তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার প্রাক মুহূর্তে মন্তব্য করায় যে দল শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস না করে অগ্নিমিত্রা পল, সায়ন্তন বসুদের শো-কজ করে সেই বিজেপি জন বার্লা, সৌমিত্র খাঁদের শোকজ তো দূরের কথা সেন্সর পর্যন্ত করল না? আর এ থেকেই বিজেপির অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে সংশয়। দলের অনেকেই কৌতূহলী, তাহলে কি এই মন্তব্যে পার্টির ইন্ধন রয়েছে? শুরুতে ব্যক্তিকে দিয়ে বলিয়ে বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা নয় তো?
উল্লেখ্য, বাজপেয়ী জমানায় তিনটি রাজ্য ভাগ হয়েছিল। বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ভেঙে উত্তরাখণ্ড এবং অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা। বিজেপি ছোট রাজ্যের পক্ষে। তদের বক্তব্য, সুশাসন নিশ্চিত করতে রাজ্য আয়তন ও জনসংখ্যায় ছোট হওয়া দরকার। নরেন্দ্র মোদী জমানায় ‘মিশন কাশ্মীর’ও এ ক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ। ভূস্বর্গে ৩৭০ ধারা তথা বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বিলোপের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে দু-টুকরো করে রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, আসলে বিজেপি চায় রাজ্যগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে তাদের ক্ষমতা খর্ব করতে। যাতে কেন্দ্রের হাতেই সবটা থাকে। এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিয়ম করে বিজেপির সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূলে কুঠারাঘাত করতে চাইছে।