আগামী ২০২৪-এ দেশে লোকসভা নির্বাচন। সেই ভোটযুদ্ধে মোদীকে পরাস্ত করতে বাংলা মডেলকেই হাতিয়ার করতে চান ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর৷ বিরোধীরা যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বলছেন, বিজেপিকে সরাতে সেই ফর্মুলা আদৌ কার্যকরী হবে না বলেই মনে করেন তিনি৷ সংবাদ মাধ্যমকে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন পিকে৷ তাঁর মতে, বাংলার মতো গোটা দেশেই মোদী বিরোধী ভোট এক জায়গায় আনতে পারলেই বিজেপিকে হারানো সম্ভব৷ সেই কারণেই মমতার দেখানো পথেই রাজ্যভিত্তিক একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলায় জোর দিতে চান পিকে৷ তবে মমতা মডেলই যে ২০২৪-এর লড়াইয়ে প্রশান্তের তুরুপের তাস হতে চলেছে, তা এক রকম স্পষ্ট৷
সোমবারও এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রশান্ত কিশোর৷ এই নিয়ে গত দু’ সপ্তাহে দ্বিতীয় বার পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রশান্ত কিশোর৷ সেই বৈঠকে ২০২৪ নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে বলে নিজেই স্বীকার করেছেন পিকে৷ তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন নিয়েই আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে৷ প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা আমরা কথা বলেছি৷ তবে এই বৈঠকের সঙ্গে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিকল্প শক্তির কোনও সম্পর্ক নেই৷ কারণ দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিকল্পের যে কথা বলা হচ্ছে, তা অর্থহীন৷ ইতিহাসই বলছে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিকল্প তৈরি করে বিজেপিকে আটকানোর কৌশল সফল হয়নি৷’
আর এই কারণেই এ দিন শরদ পাওয়ারের সঙ্গে অকংগ্রেসি বিরোধী দলগুলির বৈঠকেও হাজির থাকছেন না পিকে৷ তবে যেভাবে তিনি শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, আগামী দিনে অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রশান্ত৷ ২০২৪-এর লড়াইয়ে তিনিই যে চাণক্য হয়ে উঠছেন, সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট৷ পিকে মনে করেন, প্রথমেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিকল্প হিসেবে মানুষের কাছে গেলে সেই শক্তির কোনও গ্রহণযোগ্যতাই থাকে না৷ ফলে লড়াইয়ে নামার আগেই হার একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়৷ তাই মোদী বিরোধী মূল বিকল্পের ওপরই জোর দিতে চান ভোট গুরু পিকে৷ দেশ জুড়ে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তিনিও স্বীকার করছেন৷
তবে দেশের সর্বত্র বিরোধীরা একক শক্তি হিসেবে লড়লে যে বিজেপিকে হারানো সম্ভব নয় সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন পিকে৷ আর এখানেই অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে রাজ্য ভিত্তিক একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের উপর জোর দিতে চাইছেন প্রশান্ত কিশোর৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েও বিজেপির সঙ্গে এই সরাসরি লড়াইয়ের কৌশলেই জোর দিয়েছেন৷ অর্থাৎ, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী সরাসরি তাদের সঙ্গেই বিজেপির একক লড়াই হোক৷ যাতে বাংলার মতোই মোদী বিরোধী ভোট এক জায়গায় জড়ো করা যায়৷ আর তাহলেই ২০২৪-এ বিরোধীরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বলেই আত্মবিশ্বাসী প্রশান্ত৷
উদাহরণ হিসেবে বাংলা মডেলের কথাই তুলে ধরা যায়৷ কারণ এ রাজ্যে খাতায় কলমে সংযুক্ত মোর্চা লড়াইয়ে থাকলেও মোদী বা বিজেপি বিরোধিতার জন্য মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের উপরেই আস্থা রেখেছেন মানুষ৷ তাই জোট বাঁধলেও ধুয়ে মুছে গিয়েছে সংযুক্ত মোর্চা৷ অন্যদিকে মোদী বিরোধী প্রায় গোটা ভোটটাই তৃণমূলের ঝুলিতে যাওয়ায় বাংলায় বিজেপির বিধ্বস্ত হয়েছে৷ দেশের অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও বিজেপিকে হারানোর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে৷ তাই বিরোধী শক্তিগুলিকে বাংলা মডেলের গুরুত্বই বোঝাতে চান প্রশান্ত কিশোর৷