পূর্ব ভারতে এই প্রথম। তাও আবার খোদ শহর কলকাতায়। ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় সন্তানের জন্ম দিলেন মা। করোনা আক্রান্ত এক মায়ের অস্ত্রোপচার করলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা এক নজির গড়ল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউইও যখন দেশ জুড়ে মন খারাপ করা খবর, তখন কলকাতার এই বিরল অস্ত্রোপচার যেন এক আশার আলো দেখাল। সোমবারই সেই অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। মা ও সেই শিশুর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
রাখি মণ্ডল বিশ্বাস। বয়স ৩৩। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা রাখি কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত হন। ক্রমে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট এসএসবি- তে ভর্তি করানো হয় রাখিকে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রেখে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হয়। এরপর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে ৬০-এ নেমে এলে চিকিৎসকেরা রাখিকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তৈরি হয় মেডিক্যাল বোর্ড। সিদ্ধান্ত হয় অস্ত্রোপচার করে গর্ভস্থ সন্তানকে বের করে নিলে শরীরে অক্সিজেন মাত্রা বাড়ানো সম্ভব হবে।
কিন্তু এভাবে ভেন্টিলেশনে থাকা মায়ের প্রসব করানো কোনও সাধারণ ঘটনা নয়, তাই চিকিৎসকদের এই সিদ্ধান্ত জানানো হয় স্বাস্থ্য ভবনে। জানানো হয়, করোনা ওয়ার্ডের ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় সেখানে গিয়েই অস্ত্রোপচার করতে হবে। এই মর্মে আবেদন জানানোয় অনুমতি মেলে স্বাস্থ্য ভবন থেকে। তারপরেই সোমবার দুপুরে দ্রুত অস্ত্রোপচার করেন পাঁচ চিকিৎসক। শিশুকে নির্ধারিত সময়ের কয়েক সপ্তাহ আগেই বের করা হয়েছে, তাই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। শিশুদের জন্য তৈরি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটেই রাখা হয়েছে শিশুকে। মা ও শিশু দু’জনেই স্থিতিশীল আছেন বলে জানা গিয়েছে।
এডজন সেই ৫ চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌমিক, শবনম বানু, সুমনা পাল, দেবাশিস ঘোষ ও অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান। চিকিৎসক পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মা’কে বাঁচানোর জন্যই আমরা এমন চেষ্টা করেছি। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। কিন্তু এ ছাড়া আর পথ খোলা ছিল না। ইউনিট হেড অধ্যাপক তপন নস্কর বলেন, “আমাদের চিকিৎসকেরা উদাহরণ তৈরি করলেন। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বাংলা ফের নজির গড়ল।”