বঙ্গ বিজেপির মহিলা মোর্চার প্রাক্তন নেত্রী তিনি। বর্তমানে দলেরই রাজ্যসভার সাংসদ। কিন্তু তাঁর দেখা মেলে না কোথাও। রাজ্য বিজেপির নেতারা হাজারবার চাইলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেন না। তাঁকে না পাওয়া যায় দলের সভায়, না পাওয়া যায় কোনও মিছিলে বা কর্মসূচীতে। তাই দলেই নানা সময়ে প্রশ্ন উঠে যায়, ‘পাঞ্চালী কি আদৌ আছেন দলে?’ উত্তর হল, দলে থাকলেও কার্যত রাজনৈতিক সন্ন্যাস পালন করছেন বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে ‘মানিয়ে নিতে পারছেন না’ তিনি। রূপার গলায় স্পষ্ট ‘স্বপ্ন’ ভাঙার স্বর।
রাজনীতিতে এসে প্রথম থেকেই আলো ছিনিয়ে নিয়েছিলেন রুপোলি জগতের রূপা। মূলত হিন্দি ধারাবাহিক ‘মহাভারত’-এ দ্রৌপদী হিসেবে তাঁকে গোটা দেশ চিনলেও বাংলায় বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন রূপা। রাজনীতিতে যোগ ২০১৫ সালে। প্রথম ও শেষ নির্বাচনে লড়া ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে। হাওড়া উত্তরে পরাজিত হলেও সেই বছরই রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত হন অভিনেত্রী। ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিনি বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রীও ছিলেন। সেই সময়ে রাজনীতিক রূপার লড়াকু চেহারাও দেখেছে বাংলা। কিন্তু সেই তিনি এখন যেন রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে।
বিধানসভা নির্বাচন পর্বে সে ভাবে প্রচারে দেখা যায়নি রূপাকে। বিজেপি-র মধ্যে এ নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছিল। তবে দলের ‘পরিবর্তন যাত্রা’ চলার সময়ে ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিলেন। তাঁকে রাজনীতির ময়দানে কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচীতে শেষ বার দেখা গিয়েছিল ৮ মে। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপি মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় প্রধান ভনতি শ্রীনিবাসনের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন তিনি। তার আগের দিন মেয়ো রোডে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে সে ভাবে আর দেখা যায়নি রূপাকে।
বিজেপি সূত্রে খবর, দলের বিভিন্ন ভার্চুয়াল বৈঠকেও তিনি অনিয়মিত। এরই মধ্যে সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজ-এ একটি পোস্ট করেন। তাতে লেখেন, ‘রাজনীতিকে গ্ল্যামারাইজ করে লাভ নেই। অনেক রক্ত ঝরলেও কেউ পাশে থাকে না।’ সংবাদ মাধ্যমের কাছেও রূপার আক্ষেপ, ‘রাজনীতি অনেক বড় বিষয়। তার প্রতি আমার এতটুকুও অশ্রদ্ধা নেই। কিন্তু এখন রাজনীতির যে সংস্কৃতি বিশেষ করে বাংলায় দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে আমার জীবন দর্শন মিলছে না।’ তাঁর কথায়, ‘রাজনীতির বাইরেও একটা বড় সমাজ আছে। সেখানেও অনেক কাজ আছে। আমি সেটাতেই জোর দিচ্ছি। আড়াল থেকে বিপন্ন মানুষের জন্য কাজ করছি।’
রূপার সাফ কথা, মানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে যে রাজনীতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আমি সেই রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছি না। একই সঙ্গে রূপা এ-ও বলেন, ‘এই যে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মাতৃবিয়োগ হয়েছে, আমি যেতে চেয়েও যেতে পারিনি। মুকুলদার স্ত্রী অসুস্থ জানার পর থেকেই হাসপাতালে যেতে মন করেছে। কিন্তু যাইনি। কারণ, গেলেই আমি তৃণমূলে যেতে চাই বলে প্রচার শুরু হয়ে যাবে। তাই আড়ালে থাকাই ভাল।’ নিজের বা অন্য দলের রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা থেকে পারস্পরিক আক্রমণ নিয়েও অখুশি রূপা।