ক্রমাগত বৃষ্টির ফলে রীতিমতো বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলী, হাওড়ার একটা বড় অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বর্ষার শুরুতেই এমন পরিস্থিতির জন্য তৈরি ছিলেন না মানুষ। অবিরাম বৃষ্টিতে ভেসেছে হাওড়া শহর। জলমগ্ন হাওড়া পুর এলাকার প্রায় কুড়িটি ওয়ার্ড। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বহু রাস্তায় জল। সকালের পর বৃষ্টি কিছুটা কমলেও জমা জল নামেনি রামচরন শেঠ রোড, চার্চ রোড, ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস, ড্রেনেজ ক্যানেল রোড সহ অনেক রাস্তায়। সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির অলিগলিতেও জল জমে যায়। সাঁকরাইল, আন্দুল, ডোমজুর এলাকায় বহু বাড়িতে জল ঢুকে যায়। এলাকার বাসিন্দা অপর্ণা চন্দ বলেন, “অল্প বৃষ্টিতেই বানভাসি হয় এলাকা। গতরাত থেকে যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে এমন আশঙ্কা হচ্ছিলই।” হাওড়া পুর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য ভাস্কর ভট্টাচার্য জানান, “প্রবল বৃষ্টির ফলে নিকাশির সমস্যা হয়েছে।পঁয়তাল্লিশটি পাম্প চালানো হচ্ছে। তবে গঙ্গার জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় জল নামতে দেরি হচ্ছে।”
পাশাপাশি একই অবস্থা হুগলীতেও। শহরের একাধিক জায়গায় বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। উত্তরপাড়া কাঁঠালবাগান বাজারের রেললাইনের সাবওয়ের তলায় জল জমে যান চলাচল বন্ধ। মাখলা এলাকার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইনের উপর দিয়ে যাতায়াত করছেন। এলাকার মানুষের বক্তব্য, “এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। রেল কর্তৃপক্ষ কখন পাম্প চালাবে, তার উপর নির্ভর করতে হয়।” হিন্দমোটর স্টেশন সংলগ্ন এলাকাতেও জল জমে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। চুঁচুড়া ধরমপুর, পীরতলা, ইঞ্জিনিয়ার বাগান সহ হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার বেশকিছু এলাকাও জলমগ্ন। শ্রীরামপুরের মাহেশের জিতেন লাহিড়ী রোড, জাননগর রোডও জলের তলায়।
একনাগাড়ে ভারী বর্ষণ আর অন্যদিকে দ্বারকেশ্বর নদীর জল উপচে আরামবাগ শহরের বেশ কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জল ঢুকেছে ঘরে। আরামবাগ পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধ পাড়া এলাকা সবচেয়ে বেশি জল জমেছে। এই এলাকার দুর্গতদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। লাগাতার বৃষ্টিতে দ্বারকেশ্বর নদীর জলস্তর বাড়ছে। সারারাত একটানা বৃষ্টির ফলে জলমগ্ন উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি ও পানিহাটি বিটি রোড সংলগ্ন এলাকা। জল জমে থাকার ফলে ব্যস্ততম বিটি রোডের যান চলাচল ধীরগতিতে চলছে। কোথাও হাঁটুজল কোথাও গোড়ালি পর্যন্ত জমা জলে নাকাল হতে হচ্ছে পথ চলতি মানুষকে। বিটি রোডের ধারে থাকা দোকানগুলোতে জল ঢুকে যাওয়ায় সমস্যায় ব্যবসায়ীরা। পানিহাটি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শতদল পল্লী, প্রিয়নগর, এইচবি টাউন ও কামারহাটি পুরসভার বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন। এমন বৃষ্টি চললে শিল্পাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
দু-তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকাও। ক্যানিংয়ের শরৎপল্লী, দীঘিরপাড়, সঞ্জয়পল্লী, মিঠাখালি, মমতাপল্লী, সবুজ পল্লী, নন্দন পল্লী, ঘোষপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। জীবনতলা থানা এলাকার দেউলি, আঠারো বাঁকি, বাসন্তীর চড়াবিদ্যা, সোনাখালি, রামচন্দ্রখালিও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমা জলে বড় বড় জোঁক ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিরুপায় ভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। বিভিন্ন জায়গায় নিকাশি খালের উপর অবৈধ নির্মাণ গড়ে ওঠার কারণে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। আবার কোথাও নিকাশিনালা দীর্ঘদিন পরিষ্কার না হওয়ার কারণে জল বের হতে পারছে না। তাই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বাসিন্দাদের। প্রশাসনিকস্তরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই।