একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছে দোষারোপের পালা। বারবারই বাইরে এসে পড়ছে দলের অন্তর্কলহ, নেতাদের দ্বৈরথ। যার মধ্যে এখন আলোচনার কেন্দ্রে দিলীপ ঘোষ বনাম শুভেন্দু অধিকারীর ‘ঠান্ডা লড়াই’। উনি কেন দিল্লী গিয়েছেন সেটা দিল্লীর নেতারাই বলতে পারবেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সাম্প্রতিক দিল্লী সফরের সময় সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই বলেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁকে ‘অন্ধকারে’ রেখেই যে মোদী-শাহ-নাড্ডাদের সঙ্গে বৈঠক করতে শুভেন্দু দিল্লী গিয়েছেন, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন দিলীপ। এবার প্রকাশ্য না বললেও দলের অন্দরে দিলীপ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে, সোমবার দলের বিধায়কদের নিয়ে রাজভবন সফর নিয়েও তাঁর সঙ্গে কোনও পরামর্শ তো দূরের কথা, তাঁকে কিছু জানানোও হয়নি। একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি ওই কর্মসূচীর কথা জানতে পেরেছেন।
দিল্লী সফরের সময় বিতর্ক ওঠার পরে শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, তিনি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে জানিয়েছিলেন। এবারেও শুভেন্দু শিবিরের বক্তব্য, রাজভবনে বিধায়কদের নিয়ে যাওয়ার কথাও অমিতাভর সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। বিজেপি সূত্রে খবর, সেটা দিলীপ পরে জানতে পারেন। এমনটা যাতে বারবার না হয় তা নিয়ে দিলীপ অমিতাভর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু খোদ দলের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠছে যে, রাজ্য সভাপতিকে এড়িয়ে কেন বারবার অমিতাভর সঙ্গেই কথা বলছেন শুভেন্দু? যেখানে অমিতাভ সংবাদমাধ্যমের সামনেই আসেন না। দিলীপকেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিন থেকেই পদ্মশিবিরে ‘বাড়তি গুরুত্ব’ পেতে শুরু করেন শুভেন্দু। সেই সময় দিলীপ শিবির একটু হলেও খুশি হয়েছিল। কারণ, শুভেন্দুর যোগদানে মুকুল রায়ের গুরুত্ব কমে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। কিন্তু এখন দুই শিবিরের মধ্যে দ্বৈরথ ক্রমেই বাড়ছে। যা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে শুভেন্দুর সাম্প্রতিক দিল্লী সফরে। দিলীপের থেকেও এখন শুভেন্দুর ওপর যে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশি ভরসা করছেন, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। দিলীপকে না জানিয়ে দিল্লী গিয়ে শুভেন্দু দু’দিন ধরে যেভাবে মোদী-শাহদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তা থেকে দলের নেতাদের কাছে স্পষ্ট যে, ওই সফর আচমকা ছিল না। আগে থেকেই সাক্ষাৎ ও বৈঠকের সময় ঠিক হয়েছিল। অথচ পুরো বিষয়েই দিলীপকে অন্ধকারে রাখা হয় বলে মনে করছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। এবার দলের বিধায়কদের নিয়ে শুভেন্দুর রাজভবন যাত্রা নিয়েও একই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
শুভেন্দু শিবিরের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, দিলীপের ওপরে সংগঠনের দায়িত্ব। সেখানে তাঁকে না জানিয়ে কিছুই করেননি শুভেন্দু। পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক বা রাজভবনে যাওয়ার জন্য দিলীপের ‘অনুমতি’ নেওয়ার কোনও দরকার ছিল না। দলের নেতাদের অনেকের মতে, দলের সাংগঠনিক বিষয়টি দেখবেন দিলীপ। শুভেন্দু দেখবেন পরিষদীয় বিষয়। দু’টি ক্ষেত্রে দুই নেতা সমান্তরাল ভাবে কাজ করবেন। অন্যদিকে, দিলীপ শিবিরের বক্তব্য, শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা হতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, তিনি নিজে এবং যাঁদের নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই বিজেপির বিধায়ক। তাই রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েই কর্মসূচী ঠিক করা উচিত ছিল। সেটা না করায় ‘সাংগঠনিক রীতি’ ভঙ্গ হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে অমিতাভর ভূমিকা নিয়েও। পর পর দু’টি ক্ষেত্রে শুভেন্দু তাঁকে জানালেও দিলীপকে কেন জানাননি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।