শীঘ্রই তাঁর ক্যাবিনেটে রদবদল করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাতে নতুন মন্ত্রী পেতে পারে বাংলা। এমনটাই জল্পনা গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। শুধু তাই নয়। বাংলার সাংসদদের মন্ত্রিত্ব বন্টন করা হলে রাজ্যের সংগঠনেও রদবদল হতে পারে বলে খবর। কিন্তু যেটাই করা হোক, তার আগে হিসেব চলছে কোন সাংসদের কাজের খতিয়ান কেমন। সেটা দেখতে গিয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে ১৮ সাংসদের লোকসভা এলাকায় বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের ওপর। দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে হুগলি ও ঝাড়গ্রামে। ওই দুই লোকসভা কেন্দ্রের একটি আসনেও জয় পায়নি বিজেপি।
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বড় ভরসা ছিল ২০১৯ সালে জেতা ১৮টি লোকসভা আসনের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি। ২০১৯ সালের ফলের নিরিখে রাজ্যের ১৮টি লোকসভার মোট ১২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৯৬টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু ফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছে তারা জয় পেয়েছে ৬০টিতে। বিস্তারিত হিসাব বলছে এগিয়ে থাকা ৩৭টি আসনে হেরেছে বিজেপি। কারণ, কোচবিহারের শীতলকুচিতে লোকসভার ফলের নিরিখে বিজেপি পিছিয়ে থাকলেও জয় পেয়েছে বিধানসভা নির্বাচনে।
বিজেপির বেশিরভাগ বিধায়কই উত্তরবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরের সাংসদদের রিপোর্ট কার্ডও ভাল। কোচবিহার আসনের পাঁচটি বিধানসভায় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও এ বার জিতেছে ছ’টিতে। তবে সাংসদ নিশীথ বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। আবার জন বার্লার এলাকা আলিপুরদুয়ারে ফলাফল একই আছে। ২০১৯-এর মতো ২০২১-এও সাতে সাত পেয়েছেন বার্লা। তুলনায় ফল খারাপ সাংসদ জয়ন্তকুমার রায়ের এলাকায়। জলপাইগুড়িতে তিনটি এগিয়ে থাকা আসনে হার হয়েছে বিজেপির। রাজু বিস্তার দার্জিলিঙেও একটি আসন কমেছে। কালিম্পং বিধানসভা আসনটি হারিয়েছে বিজেপি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর রায়গঞ্জ লোকসভা আসনের অন্তর্গত সাতটি আসনে ফল খারাপ হয়েছে। লোকসভায় চারটি আসনে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও বিধানসভা ভোটে জয় মিলেছে দু’টিতে। সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের এলাকা বালুরঘাটে অবশ্য একই ফল ধরে রাখতে পেরেছে গেরুয়া শিবির। একই ছবি খগেন মুর্মুর মালদা উত্তর লোকসভা আসন এলাকাতেও। দক্ষিণবঙ্গে দলকে সবচেয়ে ভাল ফল দিতে পেরেছেন রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার। লোকসভা নির্বাচনের মতো বিধানসভাতেও নবদ্বীপ ছাড়া বাকি ছ’টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি।
প্রায় একই ছবি শান্তনু ঠাকুরের বনগাঁয়। হার শুধু স্বরূপনগরে। লোকসভা নির্বাচনেও ওই আসনে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। তবে খুবই খারাপ ফল অর্জুন সিংহের ব্যারাকপুরে। ভাটপাড়ায় ছেলে পবন সিংহ ছাড়া কোনও প্রার্থীই জেতেননি। আর হুগলিতে তো সর্বত্র হার! লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ভাল ভোটে চুঁচুড়া কেন্দ্রে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও বিধানসভায় ওই আসনে সাংসদ লকেট নিজে প্রার্থী হয়ে হেরেছেন। একই অবস্থা ঝাড়গ্রাম আসনেও। সাংসদ কুনার হেমব্রমের এলাকাতেও লোকসভা নির্বাচনে পাঁচটিতে এগিয়ে থাকা বিজেপির ঝুলি শূন্য।
রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের লোকসভা এলাকা মেদিনীপুরেও ফল খুবই খারাপ হয়েছে। সাতটি আসনের মধ্যে শুধু খড়্গপর সদরে জিতেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে খড়্গপুর (গ্রামীণ) এবং মেদিনীপুরেও ভাল ফল করেছিল বিজেপি। এবার ওই দুই কেন্দ্রই গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। আবার জ্যোতির্ময় মাহাতর এলাকাতেও আসন কমেছে। লোকসভা নির্বাচনে সবক’টি আসনে জয় পেলেও বিধানসভায় বিজেপি হেরেছে বাঘমুণ্ডি এবং মানবাজারে। দলের সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের এলাকা বাঁকুড়াতেও ফল সন্তোষজনক হয়নি। লোকসভায় সাতটি আসনেই জয় পেলেও এ বার জয় চারটিতে। মন্দের ভাল সৌমিত্র খাঁ। বিষ্ণুপুর লোকসভা এলাকায় একটি আসন কমেছে— বড়জোড়া।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এস এস অহলুওয়ালিয়ার বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে মাত্র একটিতে (দুর্গাপুর পশ্চিম) জয় পেয়েছে বিজেপি। বর্ধমান পশ্চিম জেলার আসানসোল কেন্দ্রের ফলও শোচনীয়। লোকসভা নির্বাচনে সাতটি বিধানসভার সাতটিতেই এগিয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু এবার ঝুলিতে মাত্র দুই। আসানসোল দক্ষিণে অগ্নিমিত্রা পাল এবং কুলটিতে অক্ষয়কুমার পোদ্দার জিতেছেন। এবার সংগঠনে কোনও সাংসদ কতটা গুরুত্ব পাবেন, সেটা ঠিক করার আগে এই রিপোর্ট কার্ডের পাশাপাশি একাধিক বিষয় বিশ্লেষণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।