সদ্যই এরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। ভোটে ব্যর্থতার পর হিড়িক পড়েছে দলত্যাগেরও। মুকুল রায়ের মতো হেভিওয়েট নেতা বিজেপি ছেড়েছেন, লাইনে আছেন আরও বেশ কয়েকজন। একইভাবে উত্তরপ্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যর্থতা চাপা দিতে দিনরাত এক করতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতাদের। এরই মধ্যে বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের নতুন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিহার। সেরাজ্যে এনডিএ জোটের দুই ছোট শরিক হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা এবং বিকাশশীল ইনসান পার্টি রীতিমতো বেসুরো। তাঁদের সামাল দিতে আসরে নামতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতাদের।
বিতর্কের সূত্রপাত বিহারের বাঁকা জেলার একটি মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ ঘিরে। ওই বিস্ফোরণের পর গেরুয়া শিবিরের নেতারা বলতে শুরু করেন, মাদ্রাসাগুলি সন্ত্রাসবাদী তৈরির ঘাঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি নেতাদের সেই বক্তব্যের পর রীতিমতো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছেন হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার সুপ্রিমো তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝি। তাঁর বক্তব্য, দেশের দলিতরা এগোনোর চেষ্টা করলে বিজেপি তাঁদের নকশাল বলে দেগে দিচ্ছে। মুসলমানরা মাদ্রাসায় লেখাপড়া শিখলে তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সেটা দেশের একতার জন্য বিপজ্জনক হবে। এদিকে, মাঝির মুখে বিজেপি বিরোধিতার সুর শুনেই আসরে নেমেছে আরজেডি। ইতিমধ্যেই আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব মাঝিকে ইউপিএ শিবিরে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর দাদা তেজপ্রতাপ যাদব আবার সরাসরি বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে দেখাও করেছেন। তেজপ্রতাপ এবং মাঝির সাক্ষাত ঘিরে আপাতত বিহারের রাজনীতিতে তুঙ্গে জল্পনা। বাধ্য হয়ে বিজেপির তরফে সুশীল মোদী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন, জিতন রাম মাঝি এনডিএ-র সিনিয়র নেতা। তিনি কোথাও যাবেন না।
বিজেপি যখন মাঝির রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত, তখন আরেক জোটসঙ্গী বিকাশশীল ইনসান পার্টির সুপ্রিমো মুকেশ সাহানিও বেসুরে গাইছেন। টুইটারে তিনিও বিঁধেছেন গেরুয়া শিবিরকে। তাঁর বক্তব্য এনডিএর জোটসঙ্গীদের উচিত আজেবাজে বয়ানবাজি না করে রাজ্যের ১৯ লক্ষ বেকারকে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ, সার্বিকভাবে বিজেপির দুই জোটসঙ্গীই বেসুরো। আবার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও যেন খোলসের ভিতরে ঢুকে গিয়েছেন। এই অবস্থায় বিহারে সরকারের স্থায়িত্ব রক্ষা করাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির কাছে। কারণ ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় এনডিএ’র আসন সংখ্যা ১২৫। ম্যাজিক ফিগারের থেকে সামান্য বেশি। এর মধ্যে মাঝির হামের ৪ বিধায়ক এবং সাহানির ভিআইপির ৪ জন বিধায়ক আছেন। এই আটজন বিধায়ক এনডিএ ছাড়লে নীতীশের সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে।