একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ক্রমাগত অন্য দলের বিধায়কদের দলে নিয়ে এসে জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখে একাধিকবার ‘সিটিং এমএলএ’দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কথা শোনা গিয়েছে। একদা প্রধামন্ত্রীর মুখে খুল্লমখুল্লা শোনা গিয়েছিল ‘হর্স ট্রেডিং’য়ের কথাও। তাঁদের ধারণা ছিল, এভাবেই দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন তাঁরা। কিন্তু ভোটের ফলাফলে পুরোপুরি হিতে বিপরীতের সম্মুখীন হয়েছে গেরুয়াশিবির। দলবদলুরাই সবচেয়ে খারাপ ফল করেছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তাঁদের অনেকেই তৃণমূলে ফিরতেও চাইছেন। গতবারের যে বিধায়করা অনেক আশা নিয়ে পদ্মশিবিরে গিয়েছিলেন, তাঁদের সিংহভাগই এখন বিজেপির কাছে কার্যত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার্টার্ড প্লেন সহ একাধিক বিষয়ে তাঁদের পিছনে বিপুল টাকা খরচ করেছে দল। কিন্তু ভোটে তা উশুল করতে পারেনি তারা। ফলত বিজেপির মধ্যে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে আদি-নব্যের দ্বন্দ্ব।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন, এমন ৩৪ জনকে বিজেপি নিজেদের পতাকা ধরিয়েছিল। তারমধ্যে উত্তরবঙ্গের বাম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায় ভোটের অনেক আগেই মারা যান। চলতি বিধানসভা ভোটে দলবদলু সেই ৩৩ বিধায়কের মধ্যে মাত্র ১৮ জনকে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। তাঁদের মধ্যে থেকে মাত্র পাঁচজন এবারের ভোটে জিততে পেরেছেন। তাঁরা হলেন বিশ্বজিৎ দাস, মিহির গোস্বামী, তাপসী মণ্ডল, সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। এদিকে, টিকিট না পাওয়া ১৫ জন প্রাক্তন বিধায়কের মধ্যে ছ’জন ইতিমধ্যেই বিজেপি’র সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়, বাচ্চু হাঁসদা, অমল আচার্য, সোনালী গুহ, দীপেন্দু বিশ্বাস এবং মনিরুল ইসলাম। চলতি বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে রীতিমতো গোহারা হেরেছেন একাধিক হেভিওয়েট। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, শুভ্রাংশু রায়, শীলভদ্র দত্ত, বৈশালী ডালমিয়া, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ। বিজেপি সূত্রের দাবি, একাধিক প্রাক্তন বিধায়ক, যাঁরা বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রাখছেন। যে কোনও দিন তৃণমূলে ফিরে যাবেন। স্বভাবতই দলবদলুদের নিয়ে বাজিমাতের যে পরিকল্পনা দিল্লির নেতারা করেছিলেন, তা ডাহা ফেল। এমনটাই মনে করে রাজ্য নেতাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের মতো দলের আদি কর্মীরা সামনে থেকে লড়লে এমন হত না।
এপ্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “দিল্লীর নেতারা ভেবেছিলেন, বিভিন্ন দল থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে আনলেই সাফল্য মিলবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। আমি নিশ্চিত, নিচুতলার যে নেতা-কর্মীরা ২০১৯ দলকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন, তাঁরা ফের নতুন উদ্যমে ঝাঁপাবেন।” এ নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তাপস রায়। তাঁর কথায়, “বিধায়ক কিনে চমক দিতে গিয়েছিলেন মোদীবাবুরা। বাংলার মানুষ তাঁদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন।”