শেষমেশ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য সুখবর। করোনা অতিমারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে যাওয়া ইউরো শুরু হচ্ছে আজ। শুক্রবার ভারতীয় সময় মধ্যরাত পেরিয়ে, রবের্তো মানচিনির ইতালি নামতে চলেছে তুরস্কের বিরুদ্ধে। ইটালির মতো মহাশক্তির বিরুদ্ধে এর আগে কখনও জেতেনি তুরস্ক। কিন্তু অতীতে ইউরোর মঞ্চে চমক দেখিয়েছে তারা। উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে এক সময় উপরের দিকে ছিল ইতালি। ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছিল প্রথম স্রোতের সময়। হাসপাতালে উপচে পড়ছিল রুগী। অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দ আর মৃতদেহের স্তুপের সেই ভয়াবহ ছবি আতঙ্কিত করে তুলেছিল মানুষকে। এখন অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। আর বিনোদন ফিরছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ ইউরোর হাত ধরে।
প্রসঙ্গত, নজিরবিহীন ভাবে এ বারে ইউরো এগারোটি দেশে হচ্ছে। ইতালি তার মধ্যে অন্যতম। রোমে প্রথম দিনের ম্যাচে ১৬,০০০ দর্শককে মাঠে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ৫১টি ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই দর্শকেরা উপস্থিত থাকবেন। গোল এবং ফলাফল ছাপিয়ে জীবনের স্বাদ ফিরে পেতে মরিয়া ক্রীড়াপ্রেমীরা। মনে করা হয় হয় একটি ফুটবল ম্যাচ থেকেই ইতালিতে করোনা অতিমারী ছড়িয়ে পড়েছিল। আটলান্টা বনাম ভ্যালেন্সিয়ার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে ৪০,০০০ দর্শক উৎসবে মেতেছিল। ছিল দেদার আলিঙ্গন, চুম্বন। সন্দেহ করা হয়, এরপরেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে ইতালিতে। ম্যাচটি হয়েছিল মিলানে। কিন্তু লোম্বার্ডি, বার্গামো অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিলেন খেলা দেখতে। এর পরেই সেই সব অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে। সেই ম্যাচে অংশ নেওয়া ফুটবলার, কর্মরত সাংবাদিক বা সংস্থার কর্তারা অনেকে করোনা আক্রান্ত হন।
প্রথম ম্যাচের আগে চোট-আঘাতের সমস্যা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে ইতালিকে। মার্কো ভেরাত্তির হাঁটুর চোট এখনও সারেনি। তাঁকে প্রথম ম্যাচে পাওয়া যাবে না। রোমার মিডফিল্ডার লোরেনজো পেলেগ্রিনিরও চোট রয়েছে। বুধবার ট্রেনিংয়ের সময় আহত হন তিনি। প্রথম ম্যাচে তিনিও অনিশ্চিত। তবে এই ইতালি দলে বিকল্পেরও অভাব নেই। বলা হচ্ছে, এত শক্তিশালী, এত সম্পূর্ণ ইতালি দল বহু দিন দেখা যায়নি। ইতালি মানেই যে শুধু দুর্ভেদ্য রক্ষণ, সেই চিরাচরিত ধারণাটাই পাল্টে দিতে চেয়েছেন মানচিনি। উত্তেজক ও গতিময় ফুটবল খেলছে এই ইতালি দল। যাঁদের ফুটবলের সঙ্গে তিকিতাকারও তুলনা করা হচ্ছে। যে দলে ডিফেন্ডারেরা নয়, মিডফিল্ডারদের ঘিরে তৈরি হচ্ছে ম্যাচের নকশা। তবে ভেরাত্তি এবং পেলেগ্রিনি না খেলতে পারলে মানচিনির পরিকল্পনা কিছুটা ধাক্কা খেতে পারে। সেক্ষেত্রে সদ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী চেলসির জর্জিনহো, ইন্টার মিলানের নিকোলা বারেলা এবং ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি, এই ত্রয়ীর উপর নির্ভর করতে হতে পারে।
তবে কোচ মানচিনির কথা না বললেই নয়। ইতালির ফুটবল ভক্তদের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। ২০১৮ থেকে অপরাজেয় এই দল। শেষ ২৭টি ম্যাচে হারেনি তারা। ছুটছে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো। টানা আটটি ম্যাচ জিতে খেলতে নামছে ইতালি। আক্রমণে লোরেঞ্জো ইনসিনিয়ে, চিরো ইমমোবিলে এবং দোমেনিকো বেরার্দি— যে কোনও প্রতিপক্ষের মনে ভয় তৈরি করতে পারেন। চেক প্রজাতন্ত্রে বিরুদ্ধে ইউরোর শেষ প্রস্তুতি ম্যাচেও চার গোলে জিতেছে ইতালি। তবে তুরস্কও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তাই সতর্ক থাকছেন কোচ মানচিনি। বলে দিচ্ছেন, “তুরস্ককে সম্মান করতেই হবে। ওদের দলটা প্রতিভায় ভর্তি। তা ছাড়া প্রথম ম্যাচ সব সময়ই কঠিন।” করোনা-বিধ্বস্ত পৃথিবীতে ঘরের মাঠে ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতা। মানচিনি জানেন, কত বড় মঞ্চে খেলতে নামছেন তাঁর ফুটবলারেরা। যোগ করতে ভুলছেন না, “আবেগ থাকবে। কিন্তু আবেগে ভেসে গেলে চলবে না। বাঁধনহারা না হওয়াই ভাল।”
দলে চমকের অভাব নেই তুরস্কেরও। সদ্য ফরাসি লিগ জয়ী লিলের তিন সদস্য রয়েছে তুরস্ক দলে। সব চেয়ে বড় নাম অবশ্যই অধিনায়ক এবং স্ট্রাইকার বুরাক ইলমাজ। তুরস্কের কোচ সেনল গুনেস প্রতিপক্ষের নাম দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার লোক নন। বরং তাঁর মন্ত্রই হচ্ছে, ফুটবল খেলতে নামো শাসন করার জন্য। শাসিত হওয়ার জন্য নয়। তিনি বলে দিচ্ছেন, “প্রথম ম্যাচের ফল গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের শক্তিটা বুঝে নিতে চাই। হারলেও ভাল খেলা জরুরি।” পাশাপাশি তিনি যোগ করছেন, “ইউরোর মূল পর্বে আসা অবশ্যই তুরস্কের জন্য প্রাপ্তি। কিন্তু সেখানেই না থেমে আরও অনেকটা এগোতে পারি আমরা।”