বাংলায় একুশের ভোটযুদ্ধে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। একাধিক বার তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। বিভিন্ন সময় বিজেপির হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল কমিশনের বিরুদ্ধে। ২০২২-এর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার সেই প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন যোগী রাজ্যে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে এই নির্বাচনকে বিজেপির ভাগ্য নির্ধারক বলেই মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। কারণ মিথ রয়েছে, উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লী তার। এদিকে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়েছে কোভিড মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ভাবমূর্তি। এই দু’য়ের গেরোয় সে রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে গেরুয়া শিবিরের কাছে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে তাই ঘর গোছানো শুরু করেছে তারা। আর তা করতে গিয়ে দল ভাঙানোর পাশাপাশি বিজেপি নির্বাচন কমিশনেও ‘নিজেদের’ লোককে বসাচ্ছে অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
বুধবার দেশের নির্বাচন কমিশনারের পদের দায়িত্ব নেন অনুপচন্দ্র পাণ্ডে। তিনি উত্তরপ্রদেশেরই আইএএস ক্যাডার। শুধু তাই নয়, তিনি মুখ্যমন্ত্রী যোগীর প্রিয়পাত্র বলেও পরিচিত। ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব পদ থেকে অবসর নেন তিনি। তার পর অনুপ পাণ্ডেকে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা করতে চেয়েছিল যোগী। যদিও শেষপর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। পোড় খাওয়া এই আমলা কেন্দ্রের ও উত্তরপ্রদেশের একাধিক দফতরের মাথায় বসেছেন।
সূত্রের খবর, যোগীর আমলে ৬১৩ কোটি টাকার ‘গো প্রকল্প’ এই আমলারাই মস্তিষ্কপ্রসূত। গোবলয়ে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে এই প্রকল্পের অবদান অনেকটাই। আবার প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলার আয়োজন থেকে আগ্রার ভিশন পরিকল্পনা স্থগিত করে দেওয়া কিংবা জাতীয় প্রবাসী দিবসের সূচনা, সবটাই একা হাতে সামলেছিলেন অনুপ পাণ্ডে। তাই তাঁকে ছাড়তে চাননি যোগী। এবার যোগী আদিত্যনাথের সেই প্রিয়পাত্রই নির্বাচন কমিশনের মাথায় বসলেন।
উল্লেখ্য, সাংবিধানিক নিরপেক্ষ পদে বসার আগে পর্যন্ত ফেসবুক কভার পেজে মোদী এবং যোগীর সঙ্গে ছবিও ছিল অনুপ পাণ্ডের। সূত্রের খবর, কমিশনের বাকি দুই কমিশনারও কেন্দ্রের শাসক দল ঘনিষ্ঠ। যদিও ইতিমধ্যেই অনুপ পাণ্ডের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ কি যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর জেরে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। সামনে এসেছে কমিশনের অন্দরের মতান্তর।’