একুশের ভোটে মমতার পর তিনিই ছিলেন দলের দ্বিতীয় তারকা প্রচারক। জেলায় জেলায় ঘুরে প্রচার করেছেন। ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে দলের নিয়ে আসার সিদ্ধান্তও ছিল তাঁরই। তাঁর সেই পরিশ্রম এবং সিদ্ধান্তের ফল পেয়েছে দল। আর তারই পুরষ্কার স্বরূপ শনিবার তৃণমূলের যুবনেতার পদ থেকে সরাসরি দলের সাধারণ সম্পাদকে উত্তরণ ঘটেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দায়িত্ব পাওয়ার পরই বর্ষীয়ান নেতাদের বাড়ি গিয়ে প্রণাম করে পথচলা শুরু করে দিয়েছেন ত্রবীণ নেতৃত্বের প্রতি যুবনেতার ওই সম্মান প্রদর্শনে বার্তা গিয়েছে দলের সর্ব স্তরে। সেই সূত্রেই মঙ্গলবার রাত থেকে দলের কর্মী-সমর্থকরা নেটমাধ্যমে একটি নতুন ‘হ্যাশট্যাগ’ চালু করেছেন। তাতে লেখা ‘আগামীর অভিষেক’। ওই হ্যাশট্যাগের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে অভিষেকের সাক্ষাতের ছবি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হ্যাশট্যাগের সঙ্গে লেখা হচ্ছে, ‘পুরোনোকে বাদ দিয়ে নয়। তাঁদের সঙ্গী করেই পথ চলবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাই আমাদের সংস্কৃতি।’
সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার এমন আচরণে আপ্লুত দলের বর্ষীয়ান নেতারাও। রবিবার সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন অভিষেক। এই সৌজন্যের রাজনীতিকে ‘নজিরবিহীন’ বলছেন তিনি। সুব্রতের কথায়, ‘ঠিক অভিষেকের মতো না হলেও আমাদের সময়েও ভোটে জিতলে দেবীদাকে (দেবীপ্রসাদ ঘোষাল), মানুদাকে (সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়) প্রণাম করতে যেতাম। সেই সময় যাঁরা আমাদের সিনিয়র ছিলেন, তাঁদেরও প্রণাম করে আসতাম। নেতা হিসেবে প্রিয়দাকেও (প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি) প্রণাম করতাম। তবে এমন মডেলে নয়। অভিষেক যেটা করছে, সেটা খুবই ভাল। কতটা মেধা ওর মধ্যে এসেছে, তা ওর সঙ্গে আলোচনা করে আমরাও বুঝতে পেরেছি। বাঙালি সৌজন্যবোধে বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার চল তো রয়েছে। অবশ্যই অভিষেকের এই উদ্যোগের একটা মূল্য আছে। এমন পন্থায় পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। পার্টির সর্ব স্তরের কর্মীদের কাছে সংস্কৃতির একটা বার্তা যায়। এমন বার্তা যাওয়াটা ভাল।’
একই বক্তব্য প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়েরও। তিনি বলেন, ‘একজন নেতা যিনি সদ্য দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি প্রবীণ নেতাদের কাছে গিয়ে প্রণাম করে পরামর্শ নিচ্ছেন, এমন ঘটনা ভারত তথা বাংলার রাজনীতিতে কখনও ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। বিষয়টা আমার খুবই ভাল লেগেছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন প্রজন্ম আমাদের কাছে আসছে। এটা অভিনব। নতুন প্রজন্ম একটা বার্তা দিতে চাইছে— পুরনো প্রজন্মকে বাদ দিয়ে নয়। পুরনো প্রজন্মের পরামর্শ নিয়ে ওরা আগামীর পথ চলতে চায়। অভিষেক আমাকে বলেছে, কী ভাবে আমাদের পরামর্শ নেবে, কর্মপন্থা কী হবে, পার্টির নীতি কী হবে, কী ভাবে পার্টি চলতে পারে— সে সব নিয়ে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করবে।’ উল্লেখ্য, সুব্রত ও সৌগত ছাড়াও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন অভিষেক। তাদের কাছেও নিয়মিত গিয়ে পরামর্শ নেবেন বলে জানিয়ে এসেছেন ডায়মন্ড হারবারের তরুণ সাংসদ।