যেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর, আজ সেই দেশেরই আদালত তাঁর প্রপ্রৌত্রী আশিসলতা রামগোবিন্দকে হাজতবাসের সাজা শোনাল। আর্থিক দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ডারবান হাই কোর্ট। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত আশিসলতা বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী ইলা গান্ধীর মেয়ে। ইলা গান্ধী হলেন মণিলাল গান্ধীর মেয়ে, অর্থাৎ গান্ধীজির নাতনি। গান্ধীজির দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন মণিলাল।
ইলা গান্ধীজির পদাঙ্ক মেনে ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নন-ভায়োলেন্স’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। পরিবেশ সুরক্ষা, সামাজিক কল্যাণ এবং রাজনৈতিক সাম্যের হয়ে এতদিন একাধিক কর্মসূচিতে অংশও নিয়েছেন তিনি। তাঁরই মেয়ে আশিসলতা এমন কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় সকলেই স্তম্ভিত। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এসআর মহারাজ নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে মাল রফতানির নামে ৬২ লক্ষ টাকা ধার নেন আশিসলতা। অথচ পরে জানা যায়, সবই ভাঁওতা। জাহাজে কোনও জিনিসই নাকি পাঠানো হয়নি।
এই অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থও হন ওই ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে প্রাথমিক শুনানির পর ৫০ হাজার টাকা জরিমানার পর ছাড়া পান আশিসলতা। কিন্তু পরে ফের নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। সোমবার সেই মামলার শুনানি পর্ব মিটে যাওয়ার পর কারাদণ্ডের সাজা শোনায় ডারবান স্পেশালাইজড কমার্শিয়াল ক্রাইম কোর্ট। উল্লেখ্য, এস মহারাজের সংস্থার নাম নিউ আফ্রিকা অ্যালায়েন্স ফুটওয়্যার ড্রিস্টিবিউটার্স। পোশাক-আশাক, লিনেনের কাপড়, জুতো ইত্যাদি আমদানি-রফতানিতে সংস্থার সুনাম রয়েছে। এ ছাড়া তারা নিজেদের মুনাফা রেখে অন্যান্য সংস্থাকে নগদ টাকা ধারও দিয়ে থাকে।
সেই এস মহারাজের অভিযোগ, আজ থেকে ছ’বছর আগে আশিসলতা জানান, তাঁর সংস্থা নেটকেয়ার নামে আফ্রিকার একটি হাসপাতালে তিনটে কন্টেনারভর্তি লিনেনের কাপড় পাঠিয়েছে। কিন্তু কিছু আর্থিক সমস্যা থাকার কারণে তাঁরা আমদানি শুল্ক দিতে পারছেন না। ফলে কাস্টমসও বন্দর থেকে মাল নামানোর অনুমতি দেয়নি। হাতে টাকা এলে আর এই সমস্যা থাকবে না। এরপরই তিনি জিনিস কেনার রসিদ, নেটকেয়ারের বিলের ফর্দ এবং ডেলিভারির কাগজ মহারাজের হাতে দেন। এমনকী সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসেবও প্রমাণ হিসেবে পাঠানো হয়। সবকিছু দেখে এবং আশিসলতার পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় থাকার ফলে ওই ব্যবসায়ী টাকা দিতে রাজি হন। চুক্তিতে সইও করে ফেলেন।ভকিন্তু কয়েকদিন পরেই এসআর মহারাজ জানতে পারেন, সমস্ত নথিপত্র ভুয়ো।