উনিশের লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৮টি আসন পাওয়ার পর থেকেই গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অনেক বিধায়কও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এর বড় সংখ্যাটাই আবার তৃণমূল থেকে। তাঁদের অনেকেই গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে জয় পেয়েছেন মাত্র ৫ জন। কিন্তু যাঁরা জিততে পারেননি তাঁরা কি এখনও বিজেপিতে থেকে যাবেন? আর যাঁদের দলে নিলেও বিজেপি প্রার্থী করেনি তাঁরাই বা কী করবেন? ইতিমধ্যেই এমন ৫ জন পাকাপাকি ভাবে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের দিয়ে পা বাড়িয়েছেন। কিন্তু যাঁরা এখনও রয়েছেন তাঁদের তালিকা নিয়েও চিন্তিত বিজেপি। কে থাকবেন আর কে থাকবেন না, এই ভাবনা চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যেই দলের সঙ্গে দূরত্ব গড়ে বেসুরো গাইছেন। আবার কয়েকজনের বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল রায়। তৃণমূল ছেড়ে তিনি পদ্ম শিবিরে আসার পরেই শুরু হয় অন্য দল থেকে বিধায়ক আনার প্রক্রিয়া। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করায় সেই যোগদানের ধারা আরও এগিয়ে যায়। আর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে এক ঝাঁক বিধায়ক আসেন। তৃণমূল প্রার্থী না করায় দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বিজেপিতে যোগ দেন সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য থেকে সাতগাছিয়ার সোনালি গুহরা। এঁরা কেউ পদ্মের টিকিটে প্রার্থী হতে পেরেছিলেন, কেউ পারেননি। হিসেব বলছে, অন্য দল থেকে বিজেপিতে এসে প্রার্থী হয়েছিলেন ১৮ জন। জয় পেয়েছেন ৫ জন। শুভেন্দু অধিকারী, বিশ্বজিৎ দাস, মিহির গোস্বামী, তাপসী মণ্ডল এবং সুদীপ মুখোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, ১৩ জন পরাজিত প্রার্থী হলেন শুভ্রাংশু রায়, সুনীল সিংহ, সব্যসাচী দত্ত, সৈকত পাঁজা, শীলভদ্র দত্ত, বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, অরিন্দম ভট্টাচার্য, দীপক হালদার, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের মধ্যে রাজীব, সব্যসাচীর মতো কয়েকজন নেতার সঙ্গে ইতিমধ্যেই বিজেপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে কারও কারও সঙ্গে পদ্ম শিবিরের যোগাযোগই নেই বলে দাবি দলের নেতাদেরই। ইতিমধ্যেই শুভ্রাংশুকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এখন আর বিজেপি করছেন না জানিয়ে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবীর। আবার, ভোটের ফল ঘোষণার পরে ্রাক্তন বিধায়ক সোনালি গুহ, দীপেন্দু বিশ্বাস, বাচ্চু হাঁসদা, অমল আচার্য বিজেপি ছেড়ে দিয়েছেন। আগেই বিজেপি ছেড়েছেন লাভপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শিবপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ি ফল ঘোষণার পরে আর সে ভাবে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না বলেই দাবি দলের। আবার, মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা তেহট্টের প্রাক্তন বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তের। বাকিদের তালিকা নিয়ে চিন্তিত বিজেপি হিসেব কষছে কারা থাকতে পারেন, কারা নয়। রাজ্য বিজেপির এক নেতা জানিয়েছেন, দলবদলে বিজেপিতে আসা ৬ জন বিধায়কের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগই নেই দলের। তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। তাঁদের মধ্যে অন্যতম উইলসন চম্প্রমারি। কালচিনির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের যে ফোন নম্বর বিজেপি নেতৃত্বের কাছে রয়েছে সেটিও নাকি এখন কাজ করে না। এই তালিকায় রয়েছেন নাগরাকাটার প্রাক্তন বিধায়ক সুক্রা মুন্ডাও।