দেশজুড়ে এখনও অব্যাহত করোনার চোখরাঙানি। দেখা দিয়েছে চরম আর্থিক মন্দা। কিন্তু সেই আর্থিক সংকটেও ৫০ হাজার কোটি টাকার সাবমেরিনের বরাত দিচ্ছে মোদী সরকার। কারণটা স্পষ্ট, দক্ষিণ চীন সাগরে বেজিংয়ের সক্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। সম্প্রতি এই প্রথম ভারতের নাকের ডগায় তিব্বতের কাছে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া করেছে চীন। লাদাখে দুই দেশের সামরিক কর্তাদের মধ্যে যতই আলোচনা হোক, সমঝোতার পরও বেজিং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার সিংহভাগ এলাকা থেকে সেনাবাহিনী এবং রণসজ্জা সরিয়ে নিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পুনরায় তিক্ততার সঞ্চার হয়েছে। কোভিডকালেও বিপুলভাবে বদলে যাচ্ছে গোটা পৃথিবীর কূটনীতির সমীকরণ। এই সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মন্দার জেরে চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েও দীর্ঘদিন ধরে থমকে থাকা একটি মেগা সাবমেরিন প্রকল্পে অবশেষে অনুমোদন দিল ভারত। অত্যাধুনিক একঝাঁক ডুবোজাহাজ নির্মাণ খাতে শুক্রবার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এদিন ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের বৈঠকের পর ভারতীয় নৌবাহিনীর ওই প্রস্তাবে ছাড়পত্র দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ৫০ হাজার কোটি টাকার সাবমেরিন ও সংশ্লিষ্ট অন্য সামরিক উপকরণের অর্ডার দেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই জারি হবে টেন্ডার। স্বাধীন ভারতের সামরিক ইতিহাসে পি ৭৫ আই ক্লাস সাবমেরিন প্রজেক্ট হতে চলেছে সবথেকে আধুনিক একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়ার পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি সম্পাদন করে ওই ডুবোজাহাজগুলি নির্মাণের উদ্যোগ নেবে দু’টি ভারতীয় সংস্থা। ভারতীয় নৌবাহিনী মোট ২৪টি সাবমেরিন নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত করতে চলেছে। তার মধ্যে ৬টি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন। ভারতের কাছে এখন যে সাবমেরিন শক্তি রয়েছে, তার তুলনায় বহুগুণ ক্ষমতাশালী এই নতুন সাবমেরিন সিরিজের মধ্যে থাকবে ১২টি ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল এবং অ্যান্টি শিপ ক্রুজ মিসাইল। একইসঙ্গে নৌবাহিনীর প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই ডুবোজাহাজগুলি সমুদ্রের মধ্যেই টর্পেডো বহন এবং নিক্ষেপ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, আগামী দিনে সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে। নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে এটাই সবথেকে বৃহৎ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প হতে চলেছে বলে শুক্রবার দাবি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। বিদেশি ও ভারতীয় সংস্থার উদ্যোগে মাজেগাঁও ডকইয়ার্ড লিমিটেড এবং লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর ইয়ার্ডে এই সাবমেরিনগুলি তৈরি হবে। পি ৭৫ আই প্রকল্পে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় সাবমেরিন প্রযুক্তিকে বিশ্বসেরা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ভারত। ২০১৬ সালে ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ২০৫০ সাল পর্যন্ত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। শুক্রবার অনুমোদিত বিপুল অঙ্কের এই ডুবোজাহাজের বরাত সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে ১২ বছর। আপাতত সাবমেরিনের জন্য ৪৩ হাজার কোটি এবং সামরিক উপকরণের জন্য ৬ হাজার কোটির তহবিল বরাদ্দ হলেও এই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে। কারণ, সাবমেরিন নির্মাণের পর সেখানে যে অস্ত্রভাণ্ডার যুক্ত করা হবে, সেটির ব্যয় আগামী দিনে বেড়ে যেতে পারে।
কোভিড মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নির্মাণ। অন্যদিকে গোটা দেশবাসীর টিকাকরণের জন্য বিপুল অর্থবরাদ্দ করতে হবে কেন্দ্রকে। সরকার ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ করেছে। কিন্তু তাতেও পর্যাপ্ত টিকা না মেলায় মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে বিরোধীরা। যতটা প্রয়োজন, অনেক রাজ্যই তার সিকিভাগ ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আর এই টানাপোড়েনের মধ্যে নৌবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ হওয়ায় স্বভাবতই উঠছে প্রশ্ন ও নিন্দার ঝড়।