আর পাঁচটা দিনের মতোই সকালে বাবার সঙ্গে কাজে বেরিয়েছিলেন অসিত দাস। কিন্তু সেই যে দু’টি বাইকে করে এসে তাঁকে মারধোর করতে করতে তুলে নিয়ে যায় মেট্রো প্রোজেক্টে কর্মরত চারজন গার্ড। তারপরই তছনছ হয়ে গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা থানা অন্তর্গত রাক্ষসখালি গ্রাম থেকে দিল্লীতে আসা আস্ত সংসারটা।
প্রসঙ্গত, দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দুরের আজাদপুরের জাহাঙ্গিরপুরিতে থাকে অসিতদের পরিবার। মঙ্গলবার সকালেও বাবা মন্টু দাসের সঙ্গে কাজে বেরিয়েছিলেন অসিত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা নোংরা নিয়ে আসেন। সেখান থেকে আসে কিছু টাকা। তারপর আবর্জনায় বসে নোংরা থেকে জিনিস ঝাড়াই বাছাই করে তা বিক্রি করেও উপার্জন হয় কিছু টাকা। রাস্তায় ভ্যানের চাকা পাংচার হয়ে গেলে গ্যারেজে সারাই করতে দিয়ে বাড়ির দিকে টাকা নিতে যায় সে। এমন সময়ই দু’টি বাইকে করে এসে তাঁকে মারধোর করতে করতে তুলে নিয়ে যায় মেট্রো প্রোজেক্টে কর্মরত চারজন গার্ড। এমনটাই দাবি স্থানীয় চা বিক্রেতা শেহনাজের।
খবর পেয়েই আশপাশের তিনটি থানায় খোঁজখবর শুরু করেন অসিতের পরিজনরা। দুপুরের দিকে জাহাঙ্গিরপুরি থানা থেকে খবর আসে, খালের ধারে একটি লাশ পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় জগজীবন হাসপাতালে গিয়ে শনাক্তও হয় লাশ। এরপরই দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক পথ অবরোধও করেন হাজার দুয়েক মানুষ। এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে অসিতকে কার্যত গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর আত্মীয়দের অভিযোগ অসিতকে ইলেকট্রিক শকও দেওয়া হয়েছে। এই ভিডিওগুলিতে থাকা দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। বাকিদেরও খোঁজ চলছে।
এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ভবিষ্যৎ চলবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না অসিতের বাবা মন্টু। তাই দিল্লীর রেসিডেন্ট কমিশনারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে সাহায্য চান তিনি। অসিতের স্ত্রী তনুশ্রী উচ্চমাধ্যমিক পাশ। তাঁর জন্য যদি কোনও চাকরির ব্যবস্থা করা যায়, সেই আবেদন করেছেন মন্টু। তিনি বলেন, গত ১১ বছর আমি দিল্লীতে। আমার কাজ নোংরা ঘাঁটা। অসিত সেটা করতে চাইত না। ও তাই ত্রিপুরা গিয়ে ঠিকে মজুরি করত। লকডাউনের সময় পাথরপ্রতিমার বাড়িতে চলে যায়। সেই থেকে বসা। মাস দু’য়েক আগে আমি ফোনে বললাম, বাপ আমার তো বয়স হচ্ছে। একা আর টানতে পারছি না। তুই চলে আয়। তখনই বউ, ছেলেকে নিয়ে ও এল।’ মন্টুর আক্ষেপ, ‘কেন যে মরতে ছেলেটাকে ডেকে এনেছিলাম? জানেন ওর ইচ্ছা ছিল না দিল্লীতে এসে নোংরা ঘাঁটার এই কাজ করার।’
অসিতের স্ত্রী তনুশ্রীর কথায়, ‘ও এখানে আসতে চাইত না। বলত দিল্লী বিপজ্জনক জায়গা। আমাদের মত যারা বাইরে থেকে এসে কাজ করে, তাদের থেকে পুলিশ জোর করে টাকা নেয়। তবু শ্বশুরমশাইয়ের কথা ও ফেলতে পারেনি। এখন ভাবছি, কেন এলাম? জানি না বাচ্চাটার কী হবে?’ এদিকে, এখনও বাবাকে খুঁজে যাচ্ছে পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলে তন্ময়।