অবসর নেওয়ার পরেও যেভাবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করা হয়েছে, তা নিয়ে আবারও তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে শোকজ কতটা আইনসম্মত, তা নিয়ে ফের একবার সরব হয়েছেন প্রবীণ প্রাক্তন আমলারা। সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যসচিবকে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে শো-কজ করা কতটা আইনসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লীতে বদলির নির্দেশ ঘিরে প্রথম থেকেই সরব প্রাক্তন আমলা ও পুলিশকর্তাদের একটা বড় অংশ। সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব পদ থেকে আলাপন অবসর নেওয়ার পরেও, নতুন করে তাঁকে শো-কজের চিঠি পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি। কলাইকুণ্ডার বৈঠকে গরহাজিরার কারণে তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রাজস্ব ও অর্থসচিব সুনীল মিত্র অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আইএএস ক্যাডারের একজন অফিসারকে এ ভাবে শো-কজ করার কোনও অধিকার নেই কেন্দ্রীয় সরকারের।
তাঁর কথায়, ‘আমার ধারণা, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় শো-কজের যুক্তিসম্মত জবাব দেবেন। মনে রাখতে হবে, অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের অফিসার হলেও তিনি যখন রাজ্যে কাজ করছেন, তখন রাজ্য সরকারই তার মালিক। তাঁর কাছেই তাঁকে জবাব দিতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে যখন কেউ কাজ করেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাব দিতে হবে।’ প্রাক্তন এই আইএএস অফিসারের বক্তব্য, ‘রাজ্যের মুখ্যসচিব তো মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে থেকে কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী তো তাঁর অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্ট বা এসিআর লেখেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী যদি মুখ্যসচিবকে বলেন, আপনি আমার সঙ্গে চলুন, তা হলে তিনি যেতে বাধ্য।’
তাঁর দাবি, ‘যেহেতু এটা অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের বিষয়, তাই ক্যাট বা কলকাতা হাইকোর্ট কিছু করতে পারবে না। সুপ্রিম কোর্টে যেতে হবে।’ সুনীলবাবুর সঙ্গে একমত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর মতে, ‘অবসর গ্রহণের পর একজন অফিসারকে এ ভাবে শো-কজ করাটা রীতিবিরুদ্ধ। কেন্দ্রীয় সরকার তো সরাসরি আলাপনবাবুকে শো-কজ করতে পারে না। কারণ, তিনি আইএএস অফিসার হলেও রাজ্য সরকারের অধীনে কাজ করেছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য কেন্দ্রকে ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে রাজ্যকে বলতে হবে। দরকারে রাজ্য সরকার শো-কজ করবে। কেন্দ্র সরাসরি সেটা পারে না।’ তাঁর সাফ কথা, ‘ওঁর জায়গায় আমি থাকলে শো-কজের জবাবই দিতাম না। আদালতে যাওয়া উচিত। তা না-হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করা যাবে না।’