গত বিধানসভা ভোটে বাংলায় দেদার টাকা উড়িয়েছে বিজেপি। কিন্তু তাঁদের কাঙ্খিত ফল একদমই আসেনি। বাংলার মানুষ আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে বিজেপিকে। মুখ পুড়েছে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ-সহ বিজেপির তাবড় শীর্ষ নেতাদের। কাজেই হারের পর থেকে রাজ্য বিজেপির উপর খড়গহস্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তড়িঘড়ি বিধানসভা নির্বাচন পর্বে যাবতীয় খরচের হিসেব চাওয়া হয়েছে বঙ্গ পার্টির কাছে। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের সাফ নির্দেশ, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন পর্বে যত টাকা অর্থসাহায্য করা হয়েছে, এবার তার খরচের হিসেব দিন। কোন খাতে কত টাকা ব্যবহার করেছেন, সবিস্তার জানান সেটিও।
দলের শীর্ষ সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতায় কোনওরকম কার্পণ্য করা হয়নি। কিন্তু সঠিকভাবে অর্থ খরচ না করার জেরেই বাংলায় এহেন নির্বাচনী বিপর্যয় কি না, সেটিই এখন খতিয়ে দেখতে মরিয়া তারা। সেই কারণেই কার্যত নজিরবিহীনভাবে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে নির্বাচনী প্রচারে টাকা খরচের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব চাওয়া হয়েছে। বিজেপির অন্দরের খবর, এক্ষেত্রে যদি কোনও স্তরে ন্যূনতম খামতি ধরা পড়ে, তাহলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার চিন্তাভাবনা করছেন দিল্লীর নেতারা।
যদিও এভাবে খরচের হিসেব চাওয়াকে নজিরবিহীন বলতে নারাজ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, “রাজ্য বিজেপির কাছ থেকে টাকা খরচের হিসেব চাওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর মধ্যে কোনও বিতর্ক কিংবা জল্পনার অবকাশ নেই। এটি বিজেপির একটি রুটিন প্রক্রিয়া। যখনই নির্দিষ্ট ইস্যুতে কোনও রাজ্য পার্টির জন্য টাকা খরচ করা হয়, তখন কাজ শেষের পর সেই সংক্রান্ত হিসেব চায় দল। যাতে পুরো প্রক্রিয়াটিই স্বচ্ছ থাকে।”
বিজেপিরই আরেকটি সূত্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, নির্বাচনী খরচ সংক্রান্ত হিসেব পেশ করতে হয় কমিশনের কাছেও। দলের রাজ্য নেতারা তা না পাঠালে, কেন্দ্রীয় পার্টি ব্যয়ের নথি জমা দিতে পারে না। ফলে রাজ্য পার্টির কাছ থেকে হিসেব চাওয়াটাই দস্তুর। বিজেপির পক্ষ থেকে একে যতই ‘স্বাভাবিক’ বলা হোক না কেন, গোটা বিষয়টিকে রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের মতে, প্রধানত বঙ্গ নেতৃত্বের সাংগঠনিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই দিল্লীর বিজেপি নেতারা জোর গলায় ‘আসল পরিবর্তন’ স্লোগান তুলেছিলেন। দাবি করেছিলেন ২০০ আসন জয়ের। সেইমতোই বাংলায় দেদার টাকা খরচ করেছিল কেন্দ্রীয় বিজেপি। কিন্তু মমতা-ঝড়ের কাছে তাদের সেই অলীক স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। তিন অঙ্কেই পৌঁছতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি।