কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তাঁকে দিল্লীতে বদলির নির্দেশের পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্ন ঘুরপাক যে, কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে না থেকে কি সরকারি চাকরির প্রোটোকল ভেঙেছিলেন বাংলার মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়? আর তারই ‘শাস্তি’স্বরূপ কি কেন্দ্রের তরফে দিল্লীতে তলব? উত্তর হল, আলাপনের পক্ষেই যুক্তির পাল্লা ভারী।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ১০টায় তাঁর নয়াদিল্লীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্মিবর্গ দফতরে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু তিনি দিল্লী যাননি। তার বদলে হাজির হয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নে। তার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এই পদক্ষেপের পর আরও তীব্র হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত। আরও স্পষ্ট করে বললে মোদী-মমতা সঙ্ঘাত। কারণ, আলাপন যে দফতরের আইএএস, সেই কর্মিবর্গ দফতর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীন।
সূত্রের খবর, আলাপন কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে না থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চলে গিয়ে ‘প্রটোকল’ ভেঙেছেন বলে মনে করছে কেন্দ্র। রাজ্যে যশের জেরে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে এসে গত শুক্রবার কলাইকুন্ডা বিমানবন্দরে পর্যালোচনা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে উপস্থিত না থেকে কেবল প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট তুলে দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীঘার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে চলে যান তিনি। ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আলাপনকে দিল্লীতে বদলির চিঠি পাঠায় কেন্দ্র। অর্থাৎ, কলাইকুন্ডার বৈঠকে না থাকাটাই এই বদলির সম্ভাব্য কারণ।
প্রটোকল সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এলে সেখানে রাজ্যপুলিশের ডিজিকে পুরোদস্তুর উর্দি পরিহিত অবস্থায় হাজির থাকতে হয়। তেমনই মুখ্যসচিবকেও থাকতে হয় সরকারি পোশাক ‘বনধ-গলা’ পরিহিত অবস্থায়। প্রধানমন্ত্রী রাজ্য ছাড়া পর্যন্ত তাঁদের সেখানে থাকতে হয়। অন্তত প্রটোকল তেমনই বলে। কিন্তু আলাপন সেদিন ওই পোশাকে ছিলেন না। কারণ পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী মতোই সেদিন সকাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই যশ-দুর্গত এলাকা খতিয়ে দেখছিলেন তিনি।
এদিকে, আলাপনের পক্ষে আরেকটি অভিমত উঠে আসছে, যা তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগকে খানিকটা হলেও চ্যালেঞ্জ করতে পারে। প্রোটোকলের সঙ্গে জড়িতদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বিমান অবতরণ করেছিল কলাইকুন্ডায়। যেটি আদতে বায়ুসেনার একটি বিমানঘাঁটি। সাধারণ কোনও বিমানবন্দর নয়। সেখানে এই ধরনের প্রটোকল খাটে না। আপৎকালীন কোনও পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী বায়ুসেনার বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। যা সাধারণ প্রশাসনের পরিসরের অন্তর্ভূক্ত নয়। সে কারণেই সেখানে সাধারণ প্রশাসনিক প্রোটোকল খাটে না। এছাড়া, আদালপনকে বদলি করার আগে রাজ্যের অনুমতিরও প্রয়োজন ছিল। তা-ও করা হয়নি।