কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে না থেকে দীঘায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আর তারপরই মোদী সরকারের তরফে এসেছে তাঁর বদলির নোটিস। তবে কেন্দ্রের তরফে তাঁকে দিল্লীতে তলব করা হলেও আজ নবান্নেই দেখা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যাতে একপ্রকার সঙ্ঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি রাজ্যের সঙ্ঘাত কি তিন আইপিএস অফিসারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল? সোমবার সকাল থেকে রাজ্য প্রশাসনে নতুন করে এই জল্পনা শুরু হয়েছে।
ওই তিন অফিসার হলেন ভোলানাথ পান্ডে, প্রবীণ ত্রিপাঠি এবং রাজীব মিশ্র। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার পর ওই তিনজনকে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তখনও তাঁদের ছাড়তে রাজি হয়নি নবান্ন। তাঁরা এখনও রাজ্যেই আছেন। আলাপন-অধ্যায়ে নতুন করে যে আমলা-সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ওই তিন আইপিএসের ওপর পড়বে কি না, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর ডায়মন্ড হারবারে নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার পর ওই তিন আইপিএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে বদলি করেছিল কেন্দ্র। ঘটনার পরেই ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ, ডিআইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ প্রবীণ এবং আইজি দক্ষিণবঙ্গ রাজীবকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে বদলি করা হয়। যদিও তাঁদের কেন্দ্রীয় পদে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র (এনওসি) দেয়নি রাজ্য।
কেন্দ্র-রাজ্যের সেই দড়ি টানাটানির মধ্যেই তাঁদের মধ্যে এক জন আইপিএস অফিসারকে বদলি করে রাজ্য সরকার। অপর জনের পদোন্নতি হয়। ঘটনার দিন ভোলানাথ ছুটিতে ছিলেন এক পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণে। কিন্তু ঘটনার সময় রাজ্যে অনুপস্থিত থাকলেও ঘটনার ‘দায়’ তিনি এড়াতে পারেন না বলেই মনে করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাই অন্য দু’জনের সঙ্গে তাঁকেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল। না যাওয়ায় বদলিও করা হয় কেন্দ্রীয় সংস্থায়।
তার পর থেকে তিন অফিসার রাজ্যেই রয়েছেন। কারণ, প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সরকারের উচ্চ মহল থেকে তাঁদের হয়ে ‘প্রেয়ার’ জমা পড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। সেই আবেদনে তাঁদের রাজ্যে থাকতে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, নাড্ডার পরবর্তী সফরগুলির সময় ওই তিন অফিসার তাঁদের ‘কর্তব্য এবং দায়িত্ব’ ঠিকঠাক পালন করেছিলেন বলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট গিয়েছিল। ফলে কেন্দ্র তাঁদের বিষয়টি খানিক ‘লঘু’ করে দেখছিল।
কিন্তু এই মুহূর্তে আলাপনকে নিয়ে যে সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে, তাতে ওই তিন আইপিএসের ‘গুরুদন্ড’ হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের অনুমান, কেন্দ্রীয় সরকার অতঃপর বিষয়টিকে ততটা ‘লঘু’ করে দেখতে না-ও পারে।