মা গৃহবধূ। বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। তাঁদেরই কোভিড আক্রান্ত মেয়ের হাসপাতালে প্রথমদিনের বিল ২ লক্ষ! কি করে মেটাবে সম্বলহীন পরিবার? মুশকিল আসান হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার নিল চিকিৎসার দায়িত্ব। গোটা ঘটনায় সেতুবন্ধনের কাজ করেছে ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম। তাদেরই সহায়তায় রাজ্য সরকার নিল কোয়েলের করোনা চিকিৎসার ভার।
ডাক্তারি পাশ করে সবে হাত পাকাতে শুরু করেছে দুই বোন। মোনালিসা আর কোয়েল। কোভিড রোগীতে থিকথিক শম্ভুনাথ পণ্ডিতে ইন্টার্নশিপ করছিলেন কোয়েল। অগুনতি রোগী দেখতে হচ্ছিল তাঁকে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ জ্বর । টেস্ট করাতে টের পাওয়া যায় ফুসফুসে নোঙর ফেলেছে ভাইরাস। প্রাথমিক অবস্থায় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালেই ভরতি করা হয় কোয়েলকে। অক্সিজেন নামছিল হুড়মুড় করে। বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনে রেখেও স্যাচুরেশন ৯০ ছুঁচ্ছিল না। তবে উপায়? দিদি মোনালিসা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস। তাঁর কথায়, ‘বোনকে নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছিল ও’। তবে কি সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশন-এ দিতে হবে? মোনালিসার বক্তব্য, সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশন থেকে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল থেকে কোয়েলকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু করে পরিবার। প্রশ্ন ওঠে, বেড পাওয়া যাবে কি? এই মুহূর্তে বাংলায় রোগীর চাপ মারাত্মক।
সুরাহা খুঁজতে যোগাযোগ করা হয় ডা. কৌশিক চাকির সঙ্গে। মাইতি পরিবারের কাছে ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আপাতত ঈশ্বর। ডা. চাকির কথায়, চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে রোগী দেখছেন। অগুনতি চিকিৎসক রোগী দেখতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। আমি নিজে একজন চিকিৎসক হয়ে অন্যের বেদনায় পাশে দাঁড়াব না? ডা. চাকিকে মাইতি পরিবার জানায়, তাঁরা কোয়েলকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে চায়। প্রথমে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেখানে বেড খালি ছিল না। পরে ফুসফুসরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুস্মিতা রায়চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাশে দাঁড়ান। বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায় বেড।