বৃহস্পতিবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, যশে বিপর্যস্ত এলাকার মানুষের দুয়ারে ত্রাণ পৌঁছে দেবে রাজ্য। সে জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে তাঁর সরকার। শুধু তাই নয়, এবার কোন বিভাগ কোন ত্রাণের দিকটি দেখাশোনা করবে এবং কোন খাতে কত করে ত্রাণ মিলবে, তার বিস্তারিত হিসেবও জানিয়ে দিল নবান্ন। কৃষি থেকে শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলা পর্যন্ত কোন ক্ষেত্রে কত করে ত্রাণ ধার্য হয়েছে তা লিখে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে নবান্নের তরফে। সে নোটিসের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের সমস্ত সরকারি দফতরে এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে যশের জেরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিপর্যস্ত এলাকায় গিয়ে পর্যালোচনা করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও স্পষ্ট হবে। ৩ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত দুয়ারে ত্রানের কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ জন্য গ্রামে গ্রামে ব্লক ক্যাম্প করবে সরকার। সেখানেই গিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানাতে হবে। আগামী ১৯ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আবেদন খতিয়ে দেখা হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে টাকা দেওয়ার কাজ। সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে টাকা।
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, শস্য নষ্ট হওয়ার খাতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা অন্তত ১০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫০০ টাকা পাবেন। কৃষি দফতর এই ত্রাণের বিষয়টি দেখাশোনা করবে। আবার, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতির দায়িত্ব নিয়েছে। একেবারে ভেঙে পড়া বাড়ি ঠিক করতে ক্ষতিগ্রস্তদের ২০ হাজার টাকা এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
এদিকে, দুর্যোগে অনেকের গৃহপালিত পশু মারা গেছে। কিংবা জলের তোড়ে ভেসে গেছে। তাঁদের পাশে দাঁড়াবে রাজ্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর। মহিষ কিংবা গরুর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ হাজার টাকা এবং ছাগল, ভেড়া, শুয়োর মারা গেলে কিংবা ভেসে গেলে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হবে। অন্যদিকে ভারবাহী পশু মহিষের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ হাজার এবং বাছুরের জন্য ১৬ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পানচাষিদের উদ্যানপালন দফতরের তরফে ৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে।
মৎস্য দফতর জেলেদের পুরোপুরি ভেঙে যাওয়া নৌকো সারাতে ৫ হাজার টাকা, কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত নৌকো মেরামতিতে ৫০০ টাকা এবং জাল কেনা বাবদ ২ হাজার ৬০০ টাকা সাহায্য করবে। আর বস্ত্রবয়নশিল্পী এবং তাঁতিদের আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি দেখছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর (এমএসএমই)। সরঞ্জাম মেরামত, কাঁচামাল নষ্ট এবং গুদাম অথবা শোরুম নষ্ট হওয়ার খাতে ত্রাণ দেওয়া হবে। যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল কেনাকাটা বাবদ ৪ হাজার ১০০ টাকা করে এবং গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে।