এ যেন অসম্ভবকে সম্ভব করা! যশ মোকাবিলায় দুঃসাধ্য সাধন করল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গড়ে প্রতি মিনিটে একটি ফোন। আর তারই ফলে তিন ঘণ্টার মধ্যেই ৯৬ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় যশ মোকাবিলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে তৈরি ছিল নবান্নের কন্ট্রোল রুম। প্রশাসনিক অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে সামনে থেকে সেই কন্ট্রোল রুমে মঙ্গলবার রাতভর নজরদারি চালিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্যোগ এলেও যাতে সময়ে তার মোকাবিলা করা যায়, তা নিশ্চিত করতেই কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছিল। গাছ পড়া, বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা, পানীয় জলের অভাব, ত্রাণ, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়া-সহ হাজারো সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর সেই কন্ট্রোল রুমে ফোন করেছে আমজনতা। বেলা যত গড়িয়েছে ততই ঘন ঘন বেজে উঠেছে কন্ট্রোলরুমের ফোন। সুরাহাও মিলেছে। বুধবার প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, তিন ঘণ্টার মধ্যেই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ তিনি ঢুকেছিলেন নবান্নে। তার পর প্রায় ৩০ ঘণ্টা তিনি প্রশাসনিক অফিসারদের নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় নজরদারি চালিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতভর ১৪ তলায় নিজের দপ্তর থেকে বার বার তিনতলায় কন্ট্রোল রুমে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন, কোথায় কেমন পরিস্থিতি। রাতে হালকা খাবার খেয়ে ফের নেমে পড়েন কাজে। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেন, ‘মঙ্গলবার সারা রাত অতন্দ্র নজরদারি চালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে সামগ্রিক সমন্বয় রক্ষা করে প্রশাসনিক অফিসাররা কাজ করেছেন।’
উল্লেখ্য, গতকাল সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ যখন ল্যান্ডফল করছে ইয়াস, তখনও কন্ট্রোল রুমে নিজে নজর রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর দফায় দফায় প্রশাসনিক বৈঠক সেরে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ তিনি বেরোন নবান্ন থেকে। নবান্ন সূত্রের খবর, এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর তাদের কন্ট্রোল রুমকে দু’ভাগে ভাগ করেছিল। নবান্নে সারা বছর চালু থাকা কন্ট্রোল রুমটি প্রধানত প্রশাসনিক কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে। এলইডি স্ক্রিনে দুর্গত এলাকাগুলিতে কখনও আধিকারিকরা, কখনও মুখ্যমন্ত্রীও নজরদারি চালান। সকালে সাগরের সিসিটিভি ক্যামেরার পোল ঝড়ে পড়ে সেখান থেকে ছবি আসা বন্ধ হয়। অন্যান্য জায়গা থেকে ছবি আসছিল।
এদিকে, আমজনতার ফোন ধরা হয়েছে লাগোয়া উপান্নে মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব কন্ট্রোল রুম থেকে। যেখানে পাঁচ আধিকারিকের অধীনে ২৫ জন টেলিফোন অপারেটার সামাল দিয়েছেন আমজনতাকে। তাঁদের প্রত্যেকের ফোনের সঙ্গে ছিল কম্পিউটার টার্মিনাল। যেখানে আমজনতার বক্তব্য রেকর্ড করে লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ও বিডিও অফিসে মুহূর্তে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল। জেলা প্রশাসন থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যেই অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট দিতে হয়েছে উপান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কন্ট্রোলরুমে। এই উপান্ন কন্ট্রোল রুমের ফোন যখন উপচে পড়ছে, তখনই নবান্নর কন্ট্রোলরুমের পাঁচটি ফোন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দুই কন্ট্রোলরুমে টানা বারো ঘণ্টার প্রতিটি শিফটে কাজ করেছেন ৩৯ জন কর্মী ও আধিকারিক। এবং ১৫৮৪টি ফোন এসেছে বলে জানা গিয়েছে।