ঘূর্ণিঝড় যশের দাপটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নদী বাঁধগুলি বিস্তর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি দ্রুত আয়ত্তে আনতে তাই এখন থেকেই ভাঙা বাঁধের প্রকৃত সংখ্যা হাতে পেতে চাইছে নবান্ন। গতকাল রাত থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে জেলাশাসক ও দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করে খোঁজ নিয়েছেন।
এরপর আজ দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় যশের কারণে মোট ১৩৪টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ফলে ১ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই রিপোর্ট হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত একটি হিসেব হাতে এসেছে নবান্নের প্রশাসনিক কর্তাদের। তাতে দেখা যাচ্ছে, কেবলমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনেই বাঁধের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার কারণে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর থাকা বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কাকদ্বীপ ও সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই কারণে সাগর ব্লকের কচুবেড়িয়া সাউঘেরি এখনও জলমগ্ন। প্রশাসন সূত্রে খবর, পূর্ণিমার ভরা কোটাল এবং এই ঘূর্ণিঝড়- এই দুইয়ের কারণে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও সাগরদ্বীপের বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
সেচ দফতর সূত্রে খবর, ভরা কোটালের কারণে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে বুধবার দুপুর ১টা- এই সময়ের উপরেই বেশি নজর রেখেছিল সেচ দফতর। কারণ যশের সঙ্গে কোটালের প্রভাবে এই সময়েই প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এই ১৬ ঘণ্টা সময়ই সবচেয়ে কঠিন বলে মানছে সেচ দফতর। এই জলোচ্ছ্বাসের কারণেই বাঁধের বিস্তর ক্ষতি হয়েছে। আপাতত বাঁধ নিয়ে সেচ ও সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর মারফত প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছে নবান্ন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে বাঁধের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাতে পেলেই দ্রুত বাঁধ মেরামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন।
যশের দাপটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শঙ্করপুর, দীঘা, মন্দারমণি-সহ পাশ্বর্বতী এলাকা একেবারে বন্যা কবলিত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৫ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে নিচু এলাকাগুলি বানভাসি হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর মোট ৫১টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। নন্দীগ্রামে সোনাচূড়া-সহ বিভিন্ন গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ২০ হাজার বাড়ি ভেঙেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ৩ লক্ষের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে যশ স্থলভাগে আছড়ে প়ড়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেছেন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা-সহ বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার জেলাশাসকদের সঙ্গে।