এবার নতুন উদ্যোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘দুয়ারে সরকার’, ‘দুয়ারে রেশন’-এর এবার ‘দুয়ারে পানীয় জল’ নিয়ে হাজির হচ্ছে রাজ্য সরকার। ‘যশ’ প্রভাবিত গ্রামীণ এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘মোবাইল ট্রিটমেন্ট ইউনিট’ (এমটিইউ) নিয়ে হাজির হবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর (পিএইচই)। পুকুর, নালা কিংবা খাল যে কোনও উৎস থেকে জল তুলে মুহূর্তে তা পরিস্রুত করে পাউচবন্দি অবস্থায় পৌঁছে দেওয়া হবে বাসিন্দাদের কাছে। প্রতিটি পাউচ হবে ২৫০ মিলিলিটারের। সোমবার এই বিষয়ে রাজ্যের পিএইচ ই মন্ত্রী পুলক রায় জানান, “আমফানের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে দুর্গত এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, এবার সেই দুর্ভোগ এড়াতে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের। তাঁর সেই নির্দেশ অনুযায়ী, দুর্গত এলাকায় ‘দুয়ারে পানীয় জল’ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
পুলকবাবু আরও জানান, দক্ষিণবঙ্গে মোট ২২টি এমটিইউ-এর মাধ্যমে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে চারটি পাঠানো হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী কাকদ্বীপ, সাগর এবং বারুইপুরে। উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত অংশ হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ ও মিনাখাঁয় রয়েছে তিনটি ইউনিট। পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘায় থাকছে আরও একটি ইউনিট। বাকি ইউনিটগুলি দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলী সহ অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছ’টি এমটিইউ। ঘণ্টায় দু’হাজার পাউচ পানীয় জল তৈরি করবে ইউনিটগুলি। চাহিদা অনুযায়ী তা বাড়ানো যাবে আরও।
এদিন পিএইচই দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবার আমফানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের যে প্রকল্প, তা বিঘ্নিত হয়েছিল। এবার তাই অন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যে প্রায় ৩৫০০টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক রয়েছে। যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকবে, ততক্ষণ পাম্প চালিয়ে ট্যাঙ্কগুলি সম্পূর্ণ ভর্তি করে রাখার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। যাতে বিদ্যৎ সংযোগ না থাকলেও, ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে পানীয় জল পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা যায়। ওভারহেড ট্যাঙ্কগুলি আড়াই লাখ লিটার থেকে সাড়ে সাত লিটার জল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি পানীয় জল ‘প্রাণধারা’ও বেশি করে তৈরি করা হচ্ছে। রাজ্যের মোট ১২টি প্ল্যান্ট থেকে বোতলবন্দি পানীয় জল জেলাগুলির চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পরবর্তী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, সেনা, পুলিশ এবং অন্যান্য কর্মীদের জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভাকে এক লক্ষ বোতল প্রাণধারা সরবরাহ করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া এখন চলবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।