বাংলায় তাদের সংগঠন বৃদ্ধি ও বিস্তারের জন্য প্রতিটি জেলাতেই দামী বাইক পাঠিয়েছিল বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। ভোটের আগে সেগুলিতে চড়েই গ্রামের পর গ্রাম দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দলের নেতারা। প্রতিদিনই মোটা অঙ্কের টাকার পেট্রোলের বিল করা হয়েছিল। বিল মেটাতে কোনও সমস্যাই হয়নি। কিন্তু এই দেদার খরচ কোনও কাজে লাগল না। বিপুল সংখ্যক সিট পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। তাই এবার সেই বাইকগুলি ফেরত চাইল রাজ্য নেতৃত্ব।
এদিন দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য দখল করতে পারলে এই বাইকগুলি জেলায় জেলায় রেখে দেওয়া হত। দলের নেতারা তা চড়ে বুথে গিয়ে বৈঠক করতেন। জেলা নেতৃত্ব প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলি ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সে গুড়ে বালি। বিজেপির জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত দাস বলেন, “আমাদের প্রায় ২০টি বাইক দেওয়া হয়েছিল। বিস্তারকরাই সেগুলি ব্যবহার করতেন। তাঁরা স্থানীয় নেতাদের গাড়িতে চাপিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ায় এখন আর বাইকগুলির প্রয়োজন হচ্ছে না। সেই কারণেই সেগুলি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ইতিমধ্যে প্রতিটি জেলাতেই বিজেপি নেতৃত্ব ভোটে বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমেই বৈঠক হচ্ছে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের নেতাদের কাছ থেকে জেলা নেতৃত্ব পরাজয়ের কারণ জানতে চাইছে। পরে এই রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে। রবি ও সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলার নেতারা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। দলের এক নেতা বলেন, “বৈঠক প্রথম থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ রয়েছে। পুরনো নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বাইরে থেকে আসা বিস্তারকরাও পুরনো নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।”
জানা গিয়েছে, প্রতিটি জেলাতেই বাইরে থেকে বিস্তারকদের আনা হয়েছিল। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে একাধিক বিস্তারক দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের থাকার জন্য এলাহি বন্দোবস্ত করা হয়। ভিন রাজ্য থেকে আসা বিস্তারকদের দামী চার চাকার গাড়িও ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল। এই রাজ্যের বিস্তারকদের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল দামী বাইক। ভোটের পর আরও বেশকিছু পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল বিজেপি নেতৃত্বের সমস্ত পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে।
এবিষয়ে দলের আর এক নেতা বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব আর জেলাগুলিতে বেশি টাকা খরচ করতে চাইছে না। সব খরচ কাটছাঁট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দামী এই বাইকগুলি চালানোর জন্য অনেক বেশি পেট্রোলের দরকার হয়। সেই অর্থ এখন আর রাজ্য নেতৃত্ব পাঠাতে চাইছে না। বাইকগুলি আপাতত এক জায়গায় এনে রাখা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তা ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”