গত সোমবার সকালেই নারদ মামলায় রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। আজ, তাঁদের জামিন মামলার শুনানি গ্রহণ শুরু হল হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে।
এদিন, কেন্দ্রীয় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বৃহত্তর বেঞ্চে জানান, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চে দুটি বিষয় নিয়ে দ্বারস্থ হতে হয়েছে। গত শুক্রবার প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে রায়ের মতবিরোধ হওয়ায় এবং গৃহবন্দীর রায় নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় এমনটা হয়েছে। এরপর বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন বলেন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ থেকে বৃহত্তর বেঞ্চে মামলা শুনানির নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন আপনাদের শীর্ষে আদালতে আবেদন করতে হল? এত তাড়াহুড়ো করার কি সত্যি কোনও প্রয়োজন ছিল? দীর্ঘ সময় ধরে মামলার তদন্ত করেছে সিবিআই। এমন কোন পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হল, যাতে রাতারাতি মামলা কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে হল!
আইনজীবী কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা এখন মামলার কপি হাতে পাইনি। এখানে সিবিআই ভুক্তভোগী নয়, এখানে আমরা ভুক্তভোগী। তাই মামলার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছে সিবিআইয়ের আইনজীবি। আমাদের কথা শোনা হোক। রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী, একজন বিধায়ক ও শোভন চট্টোপাধ্যায় গৃহবন্দী রয়েছেন। আমার আবেদন মামলাটি যদি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় তাহলে রাজ্যের মানুষের ভাল হবে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই আমার এই আবেদন। তিনি আরও বলেন, সিবিআই যা ইচ্ছে করে যাচ্ছে, এর আগে কোনও মামলায় সিবিআই তদন্তের এই রকম মনোভাব দেখা যায়নি।
এরপর বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানি গ্রহণ করা হয়নি। তুষার মেহতাকে তাঁর প্রশ্ন, এখন যদি মামলার শুনানি গ্রহণ করা হয়, তাহলে কি আপনাদের অধিকার খর্ব হবে? তুষার মেহতা দাবি করেন, অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ, তাই শীর্ষ আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। যদি বৃহত্তর বেঞ্চে মামলার শুনানি হয় আমাদের কোনও আপত্তি নেই। এরপর রাজ্যের অ্যাডভোকেড জেনারেল কিশোর দত্ত রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, তা সঠিক নয়। এই মামলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা নিয়েও তো রাজ্যের হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।
তাঁর প্রশ্ন, এখন হাইকোর্টের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না কেন? এই মামলার কপিই রাজ্য সরকারের হাতে এসে পৌঁছয়নি। তাই আমি অনুরোধ করব এই বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার কোনও মন্তব্য করাই উচিত হবে না। এরপরই, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন, ইয়াস ঘূর্ণিঝড় এ রাজ্যে আছড়ে পড়তে পারে, প্রযুক্তিগত সমস্যা হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি শুরু হয়নি। আগামী বুধবার প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে মামলার শুনানি নাও হতে পারে। তাহলে আজ অসুবিধে কোথায়? এই সময়ে মামলার শুনানির ওপর মুলতুবি রাখার আবেদন করে সিবিআই। কিন্তু সে আবেদন খারিজ করে বৃহত্তর বেঞ্চ। মামলার শুনানি শুনবেন বলে জানান বৃহত্তর বেঞ্চেের বিচারপতিরা।