অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে যেখানে ১ লক্ষ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছিল বাংলায়, সেখানে প্রথম দফায় কেন্দ্রের মোদী সরকার মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় তারা আরও ২৭০৭ কোটি টাকা দেয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট ৩৭০৭ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় সাহায্য পেয়েছিল বাংলা। যা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিল রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এবার ঘূর্ণিঝড় যশের ক্ষতিপূরণ নিয়ে ফের সরাসরি সঙ্ঘাতে কেন্দ্র এবং রাজ্য। ক্ষতিপূরণ বাবদ অগ্রিম বরাদ্দ নিয়ে বাংলার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে এবার অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় যশের জন্য বঙ্গোপসাগরবর্তী বাংলা, উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে আগাম তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকও করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানেই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি আঁচ করে প্রত্যেক রাজ্যের বিপর্যয় খাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ বরাদ্দ করেন তিনি। বাংলার জন্য সেই বরাদ্দের পরিমাণ নিয়েই আপত্তি তুলেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির জন্য যেখানে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র, সেখানে বাংলার জন্য মোটে ৪০০ কোটি। ওই দুই রাজ্যের তুলনায় বাংলার আয়তন এবং জনঘনত্ব বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অমিতের সঙ্গে বৈঠক সেরেই সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে যশ প্রতিরোধে রাজ্যের পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। বলেন, ‘বাংলা, উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে নিয়ে আজ একটা বৈঠক করেছেন অমিত শাহ। ঘোষণা করেছেন, উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশ ৬০০ কোটির ওপর টাকা পাবে। বাংলাকে দেওয়া হবে ৪০০ কোটির সামান্য বেশি। আমি বলেছি, উড়িষ্যা, অন্ধ্রের থেকে বাংলা অনেক বড় রাজ্য। আমাদের জনঘনত্ব এবং জেলাও অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও বারবার কেন বঞ্চিত আমরা?’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রের বেশি টাকা পাওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি নেই। আপত্তি বাংলাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করায়। কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদুত্তর দিতে পারেননি। মমতার কথায়, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই বৈষম্য কেন? উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রও উপকূলবর্তী রাজ্য। তাদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই আমার। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে পুদুচেরির তুলনা চলে কি? আয়তন, জনঘনত্ব, ভৌগলিক অবস্থান দেখতে হয়। আমি আমার কথা তুলে ধরি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘মমতাজি আমরা পরে কথা বলব। বৈজ্ঞানিক ভাবে সব কিছু ঠিক হয়েছে’। এর পর আর কিছু বলিনি আমি। কারণ আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভালই বুঝি। কিন্তু এই বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান কম।’