বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোমর বেঁধে নেমেছে তৃণমূল সরকার, সংক্রমণ রুখতে রাজ্যজুড়ে কার্যত লকডাউন জারি করা হয়েছে, তখনই প্রায় পাঁচ বছরের পুরনো নারদকাণ্ডে অতিসক্রিয় হয়ে সোমবার রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
করোনা আবহে সিবিআইয়ের এ হেন অতিসক্রিয়তাকে বাংলার মানুষ যে বাঁকা চোখে দেখছে, তা বিলক্ষণ আন্দাজ করতে পেরেছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কারণ করোনার ভয়াবহতাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যেভাবে সিবিআই আদাজল খেয়ে ঝাঁপিয়েছে নারদ-মামলার ‘হেস্তনেস্ত’ করতে, তা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সমালোচনার ঝড় বইছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। নাগরিক সমাজের ক্ষোভে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বঙ্গ-বিজেপি। রাজনীতির ময়দানে গেরুয়া শিবিরকে এর মূল্য চোকাতে হবে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য বিজেপির অনেক শীর্ষ নেতাই।
একদিকে করোনার দাপট, অন্য দিকে ফের ঘূর্ণিঝড় যশ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা। এই অবস্থায় ছ’বছরের পুরোনো একটি মামলার ফয়সালার থেকেও সাধারণ মানুষের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজেদের জীবন-জীবিকা সুনিশ্চিত করা। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা আম-আদমির এই মনোভাবের কথা দিল্লীর শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। রাজ্য বিজেপির এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘করোনার আতঙ্কে সাধারণ মানুষ জেরবার। তার মধ্যে আবার এক বছর আগের ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসার আশঙ্কা। এই অবস্থায় মানুষ দেখছে, রাজ্যের যে মন্ত্রীরা করোনা মোকাবিলা করবেন, তাঁদেরই সিবিআই জেলে আটকে রাখছে। যতই আমরা বলি, এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু মানুষ বোকা নয়। সব বোঝে।’ যদিও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘পাবলিক পারসেপশন’ নিয়ে এখন মাথা ঘামাতে চাইছেন না। পার্টির অন্দরে তাঁদের যুক্তি, সামনে কোনও ভোট নেই। তাই আম-জনতা কী ভাবল, তার থেকে অনেক জরুরি তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের জেলে যেতে দেখে পার্টি কর্মীদের চাঙ্গা হয়ে ওঠা।
রাজ্য বিজেপির সিংহভাগ নেতাই অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের অভিমত, জনগণকে বাদ দিয়ে রাজনীতি হয় না। তাই সাধারণ মানুষ কোন ঘটনায় কী ভাবে ‘রি-অ্যাক্ট’ করছে, সেটা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ করতে হয়। যে ঘটনা সাধারণ মানুষের বিরক্তি তৈরি করে, সেই ঘটনা কোনও দিনই দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে পারে না। শুধু জনমানসে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হওয়াই নয়, সিবিআই-এর তৎপরতার দৌলতে বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলির মধ্যে দূরত্ব কমতে শুরু করেছে বলেও অভিমত বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। নারদ-মামলায় সিবিআইয়ের তৎপরতা শুরু হওয়ার পর বাম-কংগ্রেস, নকশালরাও কেন তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যেমন কোনও রাখঢাক না করেই সিবিআইয়ের তৎপরতাকে বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। সিপিএম-ও প্রেস বিবৃতি দিয়ে ফিরহাদ হাকিমদের গ্রেফতার করার সময়কাল নিয়ে মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে। এই ইস্যুতে নকশালপন্থী বেশ কয়েকটি সংগঠন রাস্তায় নেমে মিছিলও করেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।