ভারতে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অক্সিজেনের অভাবে প্রতি মুহূর্তেই দেশের কোনও না কোনও প্রান্তে মৃত্যু হচ্ছে করোনা রোগীর। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনেরও দেখা নেই। তবে অতিমারির এমন চরম পরিস্থিতিতেও ঘটা করে মোদীর নয়া বাসভবন নিমার্ণের কাজ চলছে। সেই কাজ যাতে বন্ধ না হয়, ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা রিডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের অন্তর্গত এই কর্মসূচীকে ‘অত্যাবশকীয় পরিষেবা’র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশের রাজধানী যেখানে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ‘অমানবিক’ পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব বিরোধীরা। এবার সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করা হল হিটলারের আউশভিৎজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের। সংসদ ভবন এবং সংলগ্ন এলাকার পুনর্নির্মাণের এই উদ্যোগকে দেগে দেওয়া হল ‘মৃত্যুদুর্গ’ হিসেবে। মেগা প্রজেক্ট বন্ধ করার দাবিতে দিল্লী হাইকোর্টে হওয়া মামলার রায়দান অবশ্য স্থগিত রেখেছে আদালত।
ইতিহাসবিদ সোহেল হাশমি এবং অনুবাদক অন্যা মালহোত্রা মোদী সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প বন্ধের দাবিতে দিল্লী হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা বলেন, তাঁরা শুধু দিল্লীর মানুষের জনস্বাস্থ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। শ্রমিকদের জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। সেখানে বিছানাপত্র কিছুই নেই। চিকিৎসার পরিষেবা, কোভিড বিধি নিয়ে মিথ্যে বলছে কেন্দ্র। বলা হচ্ছে, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কাজের জায়গায় থেকে গিয়েছেন, কিন্তু সেটা সত্যি নয়। মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, এই সেন্ট্রাল ভিস্তা আসলে ‘সেন্ট্রাল ফোর্টেস অব ডেথ’ অর্থাৎ ‘কেন্দ্রীয় মৃত্যুদুর্গ’।
মামলাকারীর আইনজীবী এই প্রকল্পকে আউশভিৎজের জার্মান কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের আউশভিৎজে যুদ্ধবন্দীদের জন্য কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প তৈরি করেছিল হিটলারের জার্মানি। যেখানে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। পালটা জোরাল সওয়াল করেছেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতাও। তাঁর সাফ কথা, ২০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প নিয়ে কিছু মানুষের শুরু থেকেই আপত্তি ছিল। তাই নানা অজুহাতে এই প্রকল্প বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্র ওই এলাকায় কোভিড বিধি পালনের সব রকম ব্যবস্থা করেছে। মামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে এই মামলাটি খারিজ করে দেওয়া উচিত বলেও দাবি তাঁর। প্রকল্পের বরাত পাওয়া শাপুরজি পালনজি সংস্থাও জনস্বার্থ মামলার বিরোধিতা করেছে। যদিও দিল্লী হাইকোর্ট শেষপর্যন্ত রায়দান স্থগিত রেখেছে।