দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। রূপ বদলে এখন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এই মারণ ভাইরাস। এর জেরে একদিকে যখন ঝড়ের গতিতে বাড়ছে দেশের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা, লম্বা হচ্ছে মৃত্যুমিছিল৷ তখন করোনার সঙ্গে লড়াই করার একমাত্র অস্ত্র টিকার জন্য হাহাকার চলছে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশে টিকাকরণ শুরু হলেও, টিকার জোগানে ঘাটতির অভিযোগ উঠে আসছে শুরু থেকেই। বৃহস্পতিবারই কোভিশিল্ডের ২টি টিকার মধ্যেকার ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এই নিয়ে গত ৩ মাসে দ্বিতীয় বার ব্যবধান বাড়ানোয় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় দফার টিকাকরণে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের রাখাটা যুক্তিযুক্ত হয়নি, এমনই মনে করছেন কেন্দ্রের কোভিড বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ডক্টর এন কে অরোরা। তাঁর বক্তব্য, দেশে এখন টিকার জোগান কম। ফ্রন্টলাইন কর্মী ও ৪৫ উর্ধ্বদের দেওয়ার মতো টিকা আছে, কিন্তু কমবয়সীদের দুটি করে ডোজ দিতে হলে যে পরিমাণ টিকা দরকার তা এখনই সরকারের হাতে নেই। টিকার উৎপাদনেও কিছুটা সময় লাগবে। তাই কমবয়সীদের টিকাকরণ আরও একটু পরে শুরু করাই উচিত ছিল বলে মনে করছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, মে-জুন মাসের মধ্যে দেশের ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। প্রথম দফায় ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ-প্রশাসন, পুরকর্মী সহ কোভিড ফ্রন্টলাইন কর্মীদের টিকার ডোজ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয় ৪৫ ঊর্ধ্ব কোমর্বিডিটির রোগী ও বয়স্কদের। তারপর সেই তালিকাই বাড়িয়ে ৪৫ উর্ধ্ব সকলকেই টিকাকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তৃতীয় দফায় কমবয়সীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। এই তালিকায় রাখা হয় ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের। কেন্দ্রের কোভিড প্যানেলের প্রধান ডক্টর অরোরা বলছেন, ভ্যাকসিনের সঞ্চয় কতটা আছে সেটা হিসেব না করেই টিকাকরণের তালিকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাছাড়া টিকার সেকেন্ড ডোজ প্রাপকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এই সময়। তাই সব মিলিয়ে টিকার কয়েক কোটি ডোজ দরকার। যার জোগান এই মুহূর্তে নেই। ডক্টর অরোরার মতে, ভ্যাকসিন তৈরি করা আর তার উৎপাদন বাড়ানো সহজ কাজ নয়। এর জন্য সময় লাগে। দেশে এখন দুটি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় টিকাও চলে এসেছে। জুন মাসের মধ্যে আরও কয়েকটি টিকা দেশের বাজারে আসার কথা রয়েছ। সব মিলিয়ে ৫০-৫৫ কোটি ডোজ তৈরি হবে জুন মাসের মধ্যেই। তখন সকলকে টিকা দিতে কোনও সমস্যা থাকবে না।