তিনি মনেপ্রাণে আরএসএস কর্মী। বিজেপিকে যেমন সমর্থন করতেন, তেমনি ভক্ত নরেন্দ্র মোদীরও। এমনকী গাড়ির পেছনে লাগানো স্টিকার থেকে শুরু করে হোয়াটসঅ্যাপের ডিসপ্লে পিকচার, সবেতেই জ্বলজ্বল করত প্রধানমন্ত্রীর হাসিমুখ। আবার টুইটারের কভারেও ছিল রামমন্দিরের ছবি। এ হেন আত্মনিবেদনের স্বীকৃতিও জুটেছিল। তাঁকে টুইটারে ‘ফলো’ করতে শুরু করেন খোদ মোদীও। কিন্তু সেই আগ্রার অমিত জয়সোয়ালের শেষ পরিণতি যা হল তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। ভাগ্যের এমনই পরিহাস, করোনা আক্রান্ত হয়ে অমিত যখন হাসপাতালে ভর্তি, তখন সেই টুইটারেই বারবার মোদী-শাহদের কাছে দরবার করে খালি হাতে ফিরতে হল। এমনটাই অভিযোগ তাঁর আত্মীয়দের।
চিকিৎসায় গাফিলতি, চিকিৎসকদের গা ছাড়া মনোভাব, ভ্যাকসিনের আকাল, সিলিন্ডারের ঘাটতি— করোনাকালে দেশের আমজনতার বড় অংশ যা যা অভিযোগ তুলেছেন, সেসবই শোনা গেছে অমিতের দিদি সোনু আলঘের মুখে। ভাইকে খুইয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে হারিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর প্রতি ন্যূনতম সম্মানও। গাড়ির সেই জ্বলজ্বলে স্টিকার আজ উধাও। উলটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একের পর এক অভিযোগ তুলছেন সোনু। পরিবার সূত্রে খবর, ১৯ এপ্রিল অমিত ও তাঁর ভাই রাজকমল জয়সওয়াল কোভিডে আক্রান্ত হন৷ তড়িঘড়ি তাঁদের আগ্রার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এরপরই একের পর এক সমস্যা মাথাচাড়া দিতে থাকে।
বাধ্য হয়ে অমিতকে মথুরা আনা হয়। কিন্তু তাতেও দুর্ভোগ মেটেনি৷ করোনাকালে জীবনদায়ী রেমডেসেভির ওষুধের খোঁজ কোত্থাও মিলছিল না। বাধ্য হয়ে টুইটারে মোদী ও শাহকে ট্যাগ করে পোস্ট লেখেন সোনু। কিন্তু সময় গড়ায়। কোনও সাড়া মেলে না। এর কয়েকদিন পর ওষুধ হাতে আসে বটে। কিন্তু ততদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। অমিতকে কোনওভাবে চিকিৎসকেরা বাঁচাতে পারেননি। উল্টে ধরানো হয়েছে বিল বাবদ লম্বা ফর্দ। সেটা নিয়েও বিজেপির দুই শীর্ষ নেতার কাছে আবেদন জানায় অমিতের পরিবার৷ অভিযোগ, এরপরেও কোনও উত্তর আসেনি। সোনুর প্রশ্ন, অমিতের কি এটাই ভবিতব্য ছিল? দিনের শেষে তিনি কি সত্যিই তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পেলেন?
তিনি বলেন, ‘আমার ভাই গোটা জীবনটাই নরেন্দ্র মোদীকে দান করেছেন। কিন্তু মোদী তাঁকে কী ফিরিয়ে দিলেন? এমন প্রধানমন্ত্রী কি সত্যি আমাদের দরকার? আমি ইতিমধ্যে গাড়ির পোস্টার ছিঁড়ে দিয়েছি।’ ঘাড়ে এখনও হাসপাতালের বিলের চাপ। প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। কীভাবে মেটাবেন, জানেন না কেউই। তাই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কাতর গলায় এখনও আর্জি জানিয়ে চলেছেন অমিতের ভাই রাজেন্দ্র, ‘দয়া করুন আমাদের। আমরা জানি, আপনার আরও অনেক সমস্যা মেটানোর রয়েছে৷ কিন্তু আপনি এখনও দেশের প্রধানতম ব্যক্তি। তাই আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করুন।’