উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গোয়ার। বরেলীর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী গঙ্গোয়ার রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করে গত ৬ই মে-র ওই চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে রীতিমতো নাকানি-চোবানি খাচ্ছেন কোভিড রোগীরা। ভেন্টিলেটর-সহ ডাক্তারি যন্ত্রপাতির কালোবাজারি চলছে। অথচ ফোন পর্যন্ত ধরছেন না বরেলীর স্বাস্থ্যকর্তারা। বিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করেছেন ফিরোজাবাদের বিজেপি বিধায়ক পাপ্পু লোধি। তাতে বলেছেন, তিনি নিজে কোভিড পজিটিভ। তাঁর স্ত্রীও। অথচ আগরার এস এন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে শয্যার অভাবে দু’তিন ঘণ্টা মাটিতে শুতে হয়েছে স্ত্রীকে। গোলা গোকরনাথের বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ গিরির বক্তব্য, “গত দশ দিনে কয়েকশো মানুষ, দু’ডজন বন্ধু অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছেন। এটাই প্রকৃত ছবি।”
প্রসঙ্গত, আগামী বছরই বিধানসভা ভোট। তার আগে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অব্যবস্থার অভিযোগ উঠছে সর্বস্তরে। রাজ্যে সদ্য শেষ-হওয়া পঞ্চায়েত ভোটে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জনতার ক্ষোভের আঁচ লেগেছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। এদিকে, হতাশা বাড়ছে যোগীর দলেও। লখনউ পশ্চিম, রায়বরেলী, বরেলী এবং ঔরৈয়ার চার বিজেপি বিধায়ক কোভিডে মারা গিয়েছেন। আত্মীয়বিয়োগ হয়েছে অনেকের। প্রশাসনের উপরেই প্রবল ক্ষুব্ধ প্রয়াত নেতাদের পরিজনেরা। অনেক মন্ত্রী-বিধায়কই যোগীকে চিঠি লিখেছেন। তাঁদের অন্যতম, বরেলীর বিধায়ক কেশর সিংহ কোভিডেই মারা গিয়েছেন। এ ছাড়াও চিঠি লিখেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠক, মোহনলালগঞ্জের বিধায়ক কৌশল কিশোর (তাঁর ভাই মারা গিয়েছেন), বস্তীর সাংসদ হরিশ দ্বিবেদী, ভদোহীর বিধায়ক দীননাথ ভাস্কর এবং কানপুরের সাংসদ সত্যদেব পচৌরি। বক্তব্য মোটামুটি একই। হাসপাতালের বেড কিংবা অক্সিজেন চেয়ে আর্জির বন্যা আসছে। অথচ কিছু করতে পারছেন না তাঁরা। গ্রামাঞ্চলে অবস্থা খারাপ হচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই যে, সদ্য কোভিড থেকে সেরে উঠেই জেলা সফরে যেতে শুরু করেছেন যোগী। বরেলী, গোরক্ষপুর, অযোধ্যা এবং বারাণসীতে গিয়েছেন তিনি। রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ অবশ্য দাবি করলেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ক্ষমতা ও চাহিদার অনুপাতটা এখনও ১:১০।
উল্লেখ্য, যোগী-রাজ্যে সরকারকে প্রশ্ন করলেই জুটছে মামলা। প্রাক্তন আইএএস অফিসার সূর্যপ্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মামলা করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীর এক হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়া কোভিড রোগীর দেহ নর্দমার মধ্যে উদ্ধার হওয়ার ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও টুইট করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, জেলা সফর ছাড়াও কোভিড রুখতে আরও অনেক কিছু করতে হবে যোগীকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, জনপ্রতিনিধিদের উদ্বেগের কারণটা স্পষ্ট। প্রথমত ব্যক্তিগত ক্ষতি। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ক্ষতি। আসন ধরে রাখার সম্ভাবনা না-দেখলে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যে পরবর্তী ভোটে টিকিট না-দেওয়ার ব্যাপারে নির্দয় হতে পারেন, সেটা তাঁরা জানেন। আবার বিজেপি ফের জিততে পারলে যোগীই উত্তরপ্রদেশের প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কুর্সিতে পাঁচ বছর পূর্ণ করে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসবেন। সে ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর উত্তরসূরী হিসেবে জোরালো হবে তাঁর নাম। এখানেই গঙ্গোয়ারদের অসন্তোষের নেপথ্যে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অঙ্ক দেখছেন কেউ কেউ। কর্নাটকে যেমন হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলে ইয়েদুরাপ্পা সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন বেঙ্গালুরু দক্ষিণের বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য।