অন্য দল থেকে নেতারা বিজেপিতে এসেই কার্যকর্তা হয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগ নতুন নয়। লোকসভা ভোটের পর থেকেই গেরুয়া শিবিরের অন্দরে এই আদি-নব্য দ্বন্দ্ব চলছে। বিধানসভা ভোটের প্রার্থী বাছাই নিয়েও বাইরে এসে পড়েছিল দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ। পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপির মাথাদের মধ্যে মতানৈক্য তো রয়েছেই। এবার একুশের যুদ্ধ মিটতেই ফের নতুন করে প্রকাশ্যে এসে পড়ল ‘পদ্ম’বনের অন্তর্কলহ। গত দু’দিন ছিল রাজ্য বিধানসভা ভবনে নবনির্বাচিত ২৯১ জন বিধায়কের শপথ গ্রহণের দিন। কিন্তু সেই শপথ গ্রহণের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে দেখা গেল ২ জন বিধায়ক শপথে নেননি। সেই দু’জন আর কেউ নন, বিজেপির দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিক। প্রথমজন রানাঘাটের সাংসদ ও দ্বিতীয়জন কোচবিহারের সাংসদ। এবারে দু’জনই বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয়ী হয়েছেন। জগন্নাথ জিতেছেন নদিয়া জেলার শান্তিপুর থেকে ও নিশীথ জিতেছেন কোচবিহার জেলার দিনহাটা থেকে। তাই তাঁরা দুইজনই এখন সাংসদ ও বিধায়কও। কিন্তু দুইজনই বিধানসভায় এসে বিধায়ক হিসাবে শপথ না নেওয়ায় জোর জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, নিশীথ ও জগন্নাথ দুইজনই আগামী ৬ মাস পর্যন্ত সাংসদ ও বিধায়ক পদ ধরে রাখতে পারবেন। কিন্তু তার মধ্যেই এই দুটি পদের মধ্যে যে কোনও একটি থেকে তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে। তাঁদের ছেড়ে দেওয়া আসনে আবারও নির্বাচন হবে, যা উপনির্বাচন হিসাবেই চিহ্নিত হবে। আর এখানেই বেঁধেছে গোল। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জগন্নাথ ও নিশীথ দুইজনই সাংসদ পদ ছাড়তে নারাজ। কার্যত তাঁরা বিধানসভা নির্বাচনেও লড়তে চাননি। দল থেকেই তাঁদের জোর করে ভোটে প্রার্থী করা হয়েছিল। সেই ভোটযুদ্ধে দুইজনই জিতেছেন তবে নিশীথ জিতেছেন মাত্র ৫৭ ভোটে যা কার্যত নৈতিক হারের সামিল। আবার বিজেপিও বাংলা দখলে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় নিশীথ ও জগন্নাথ কেউই সাংসদ পদ ছাড়তে চান না। কারণ এই পদে থাকলে যেমন বেশি ক্ষমতা ভোগ করার পাশাপাশি বেতন ও অনান্য সুযোগ-সুবিধাও বেশি পাওয়া যায়। তেমনি জেলার রাজনীতিতে বেশ ভালই ছড়ি ঘোরানো যায়। যা বিধায়ক হয়ে গেলে আর ধরে রাখতে পারবেন না নিশীথ ও জগন্নাথ। তাই তাঁরা পদ ছাড়তে নারাজ।
কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সঙ্ঘ পরিবার উভয়েই চাইছে এই দুইজনই বিধায়কের দায়িত্ব পালন করুক, সাংসদ পদ থেকে অব্যাহতি নিন। এর পিছনেও কারণ রয়েছে। শান্তিপুর ও দিনহাটা থেকে জগন্নাথ ও নিশীথ জিতলেও সেই জয়ের ব্যবধান বেশি নয়। নিশীথ জিতেছেন মাত্র ৫৭ ভোটে আর জগন্নাথবাবু জিতেছেন ১৫ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। এই দুই আসন থেকে দুই বিধায়ক ইস্তফা দিলে সেখানে উপনির্বাচন হবে। সেই উপনির্বাচনে বিজেপি যে জিতবেই তেমন কথা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারছে না। বরং উপনির্বাচনে এই দুই আসনে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনাই দেখছেন সকলে। কিন্তু নিশীথ কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে ও জগন্নাথ রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দিলে সেখানে যদি উপনির্বাচন হয় তাহলে সেখানে বিজেপি জিতে যেতে পারে। কারণ একুশের ভোটযুদ্ধে ওই দুই লোকসভা কেন্দ্রেই বিজেপি বেশ ভালো ভোটেই এগিয়ে রয়েছে। তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হিসাব কষেই চাইছে নিশীথ ও জগন্নাথ তাঁদের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিক। কিন্তু তাতে নারাজ জগন্নাথ ও নিশীথ। আর তার জেরেই তাঁরা দুইজনই সম্ভবত বিধানসভায় এসে শপথ নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।