বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই আসামে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজেপির অন্তর্কলহ। প্রথম দফা ভোটের আগেই নাম না করে সর্বানন্দ সোনওয়ালের সমালোচনা করেছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে মাথা হেঁট করলেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া যাবে না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ভোট মিটতেও আসামে মুখ্যমন্ত্রীর আসন নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত। সোনওয়াল না বিশ্বশর্মা, মসনদে কে বসবেন তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। দুই শিবিরের মধ্যে সংঘাত চরমে পৌঁছতেই শনিবার দিল্লী পৌঁছলেন উত্তর-পূর্বের রাজ্যটির দুই দিকপাল নেতা। সংঘাত মিটিয়ে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী স্থির করতেই বিশ্বশর্মা ও সোনওয়ালকে ডেকে পাঠিয়েছে গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলে খবর।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, এদিন সকাল ৮টা নাগাদ চার্টার্ড বিমানে গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে একসঙ্গে রওনা দেন বিশ্বশর্মা ও সোনওয়াল। ১০.৩০ নাগাদ দিল্লী বিমানবন্দরে পৌঁছন তাঁরা। এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বি এল সন্তোষ ও অন্য শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন অসমের দুই নেতা। তবে ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন কি না, তা জানা যায়নি। দুই নেতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অসমের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা স্থির করা হতে পারে বলে খবর। বিশ্লেষকদের মতে, বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবির পর অসমে কোনও ধরনের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চায় না বিজেপি। তাই মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও সর্বানন্দ সোনওয়ালের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
উল্লেখ্য, একদিকে নাগরিক পঞ্জি থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিতর্ক। তার উপর অসমীয়া জাতীয়তাবাদের উত্থান। এহেন পরিস্থিতিতেও অসমে বিপুল জনমত পেয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। আর এই জয়ের কৃতিত্ব ৯০ শতাংশ বিশ্বশর্মার বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। তাছাড়া, আসাম ছাড়া উত্তর-পূর্বের অন্য রাজ্যগুলিতেও জোট গড়ে পদ্ম ফুটিয়েছেন হিমন্ত। তাঁর কৌশলেই কার্যত সাফ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। ফলে শাহর অন্যতম পছন্দের সেনাপতি তিনি। তাই এই মুহূর্তে তাঁকে চটিয়ে সমস্যা বৃদ্ধি করতে চায় না গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, ভোটের নিরিখে আসামে প্রভাবশালী সোনওয়াল-কাছারি উপজাতির সর্বানন্দকে চটাতে চায় না বিজেপি। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী থাকাকালীন মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্টতা বেড়েছে সোনওয়ালের। সব মিলিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে অথৈজলে পড়েছে পদ্ম শিবির।