নির্বাচনের আগে থেকেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের স্লোগান ছিল, “বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।” আর বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় তথা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক শক্তি বাংলার মহিলা ভোটাররাই। পরিসংখ্যান বলছে রাজ্যের মোট ভোটারের ৪৯ শতাংশ মহিলা ভোটার। আর সেই ৪৯ শতাংশের মন পেতে তৎপর ছিল সবকটি দলই। প্রতিটি জনসভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ‘মা বোনেদের’ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী এর মত প্রকল্পের পাশাপাশি রাজ্যের নারীদের জন্য একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
পিছিয়ে ছিল না বিজেপিও। গেরুয়া শিবিরও মহিলাদের টার্গেট করে ইস্তেহারে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ২ মে’র ফলাফলে পরিষ্কার ৪৯ শতাংশের মন জিততে সফল হয়েছেন মমতাই।
এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক, বাংলার মহিলাদের ভোটদানের প্রবণতা কী বলছে? পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেন ৪৮ শতাংশ মহিলা, ২০১৯ এ সেটি সামান্য কমে ৪৭ শতাংশ হলেও ২০২১ এ তা বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ! অর্থাৎ রাজ্যের মোট মহিলা ভোটারের ৫০ শতাংশের সমর্থন মমতার সঙ্গে। সেখানে বিজেপিকে সমর্থন জানিয়েছেন ৩৭ শতাংশ মহিলা।
মহিলা ভোটারের বেশিরভাগটা তৃণমূলের ঝুলিতে গেলেও, মহিলারা সামগ্রিকভাবে কী ভেবে ভোট দিলেন? তার উত্তর মিলেছে ২মে ভোটের ফলাফলে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের মহিলাদের ভোট প্রাপ্তির হিসেবে বাকিদের চেয়ে মমতা অনেকটা এগিয়ে থাকলেও বিশেষ করে আদিবাসী, উচ্চবর্ণ এবং দলিত মহিলাদের ভোটের অভিমুখ পুরুষদের সাপেক্ষে অবাক করার মতো।
এদিকে, ভোটের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে শুধু উচ্চবর্ণের মহিলারাই নয় তৃণমূল গরিব মহিলাদের ঢালাও সমর্থন জোটাতে পেরেছে। দারিদ্রসীমায় বসবাস করা মহিলাদের ৫২ শতাংশ, নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলাদের ৫৫ শতাংশ, মধ্যবিত্ত মহিলাদের ৪৫ শতাংশের সমর্থন পেয়েছে তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, ২০১৯ সালের লোকসভায় দারিদ্রসীমায় বসবাস করা মহিলা এবং নিম্নবিত্ত মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন বিজেপিকে। তবে এবার সেই খেলা সম্পূর্ণ ঘুরে গিয়েছে।