করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশে। আর তার জেরে রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। হাহাকার পড়ে গিয়েছে অক্সিজেনের জন্য। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিরোধী নেতা বা মুখ্যমন্ত্রীরা যখন রাজ্যে অক্সিজেন অপ্রতুলতার অভিযোগ তুলেছেন, গোটা দেশ অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে, তখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করেছেন তাঁর রাজ্যে অক্সিজেনের কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু সেই যোগী রাজ্যেরই এমন সব ঘটনার কথা এখন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যমে সামনে আসছে যা দেখলে যোগীর দাবি নিয়ে সন্দেহ জাগতে পারে। এবার যেমন যোগীরাজ্যে চিকিৎসা না পেয়ে ৭০ হাজার টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার যাত্রা করে বাংলার দ্বারস্থ হলেন অযোধ্যার এক দম্পতি। মমতার রাজ্যে এসেই লালজি যাদব এবং রেখা যাদব পেলেন হাসপাতালে বেড এবং অক্সিজেনের নিশ্চয়তা। ‘রামরাজ্য’ অযোধ্যা থেকে হুগলির চুঁচুড়ার এসে এখন একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ওই দম্পতি।
তাঁরা জানিয়েছেন, ‘আমরা সুস্থ। আর তার থেকেও অনেক বেশি নিশ্চিন্ত।’ চুঁচুড়ার নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষও বলছেন, ওই রোগী-দম্পতি অনেকটাই ভালো আছেন। সুচিকিৎসার খোঁজে ওই দম্পতির দীর্ঘ সফর ঘিরে ইতিমধ্যেই নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ভোটের বাংলায় যখন গেরুয়া শিবির নেতৃত্ব ‘ডবল ইঞ্জিন’ গুণকীর্তনের বেলুন লাগাতার ফুলিয়ে যাচ্ছেন, তখন ওই দম্পতি মমতার ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ রাজ্যে চলে আসা প্রতিশ্রুতির ফানুস চুপসে দিচ্ছে বলেই দাবি তৃণমূলের। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতেই বহু বছর ধরে বাস করছেন ওই দম্পতি। লালজি যাদব কাজ করেন অযোধ্যার আদালতে। সম্প্রতি তিনি করোনা আক্রান্ত হন। তার পরপরই স্ত্রী রেখাদেবীর দেহেও করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। অযোধ্যাতেই চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু কাজ হয়নি। এরই মধ্যে লালজির দেহে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে। একের পর এক হাসপাতাল, ডাক্তার ফিরিয়ে দেয়। মেলে না অক্সিজেন।
এরপরই হুগলির মগরায় আত্মীয়দের বাড়ি ফোন করেন তাঁরা। সেখানেই মেলে ব্যবস্থার আশ্বাস। চিকিৎসার নিশ্চয়তা। মমতার রাজ্য থেকে আশ্বাস মিলতেই কপাল ঠুকে উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে গত বৃহস্পতিবার রওনা দেন ওই দম্পতি ও তাঁর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। প্রায় ২৩ ঘণ্টার টানা যাত্রাশেষে শুক্রবার রাতে চুঁচুড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে পৌঁছন। সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করে নেওয়া হয় যাদব দম্পতিকে। দেওয়া হয় অক্সিজেনও। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, লালজির অবস্থাই বেশি সঙ্কটজনক ছিল। এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁরা। দম্পতির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তথা সফরসঙ্গী রবিশঙ্কর যাদব বলেন, ‘আমরা ভাবিনি দিদি-জামাইবাবুকে বাঁচাতে পারব। অযোধ্যায় না আছে অক্সিজেন, না চিকিৎসা। বাংলায় এসে আমরা নিশ্চিন্ত হয়েছি।’ তবে যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বুক বাজিয়ে বলছিলেন সে রাজ্যে অক্সিজেনের অভাব নেই? রবিশঙ্করের সাফ কথা, ‘তা আমি জানি না। কিন্তু ভয়ানক একটা পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে বেঁচেছি।’