দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে প্রতিদিন ঝড়ের গতিতে বাড়ছে দেশের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন নজির গড়েছে ভারত। লম্বা হচ্ছে মৃত্যু মিছিলও। এই পরিস্থিতিতে যত তীব্র হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, ততই সেখানে বাড়ছে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। দিল্লী বা মহারাষ্ট্রের মতো না হলেও এ রাজ্যে তথা শহরেও মাথা চাড়া দিতে শুরু করেছে অক্সিজেন সঙ্কট। আর তাই শহরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কালোবাজারি রুখতে বিশেষ টিম তৈরি করল কলকাতা পুলিশ। একইসঙ্গে এই অবস্থায় কলকাতায় ওষুধের কালোবাজারিও রুখবে এই টিম।
সারা দেশেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব শুরু হয়েছে। পুলিশের কাছে খবর এসেছে, একই সমস্যা শুরু হয়েছে কলকাতার কিছু অংশেও। দক্ষিণ কলকাতার গড়ফায় করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধার পরিবারের লোকেরা তাঁর জন্য অক্সিজেন চেয়েও পাননি। বেশিরভাগ ওষুধের দোকানই জানিয়ে দিয়েছিল, তাদের কাছে অক্সিজেন নেই। যখন পরিবারের লোকেরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, হঠাৎই বাজারে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব। বহু ওষুধের দোকানই এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করতে চাইছে না। পুলিশের ধারণা, সুযোগ বুঝে কালোবাজারি শুরু হয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের।
সূত্রের খবর, দশ লিটারের একটু বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার (বি টাইপ) পাওয়া যায় সাড়ে চার হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। আবার ৪৬.৭ লিটার অক্সিজেন সিলিন্ডার (ডি টাইপ) কেনা যায় সাড়ে আট হাজার থেকে সাড়ে দশ হাজার টাকার মধ্যে। সেখানে কিছু দোকানদার ইচ্ছামতো দাম হাঁকিয়ে সুযোগ বুঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের কালোবাজারির খবর পাওয়ার পরই কড়া হচ্ছে কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখার এক কর্তা জানান, শহরে অক্সিজেনের কালোবাজারি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে ইবির পক্ষ থেকে তৈরি হয়েছে একটি বিশেষ টিম। এই টিমে রয়েছেন ৮ জন ইবির গোয়েন্দা আধিকারিক ও পুলিশকর্মী।
কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালাতে শুরু করেছে এই টিম। যে ওষুধের দোকানগুলি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে, সেগুলির তালিকা তৈরি হচ্ছে। এই দোকানগুলিতে কোন ধরনের অক্সিজেন সিলিন্ডার কত সংখ্যায় মজুত করা রয়েছে, তার হিসাব নিতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। কোনও দোকানের গোডাউনে অতিরিক্ত সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার কোনও দোকানে যদি মজুত না করা থাকে, তবে সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে কি না, সেই বিষয়টিও জানার চেষ্টা করছে এনফোর্সমেন্ট শাখার এই বিশেষ টিম।
এ ছাড়াও কলকাতার যে সংস্থাগুলি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে, তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার কত সংখ্যায় মজুত করে রেখেছে, সেই তথ্য জানতেও অভিযান চালাতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। যদি কেউ সিলিন্ডার কালোবাজারির চেষ্টা করে, তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন ইবির আধিকারিকরা। একইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে ওষুধের কালোবাজারি রুখতেও তৎপর কলকাতা পুলিশ। এই সময় কিছু দোকানের মালিক বিশেষ কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধ অতিরিক্ত মজুত করে কালোবাজারির চেষ্টা করতে পারেন বলে ধারণা পুলিশের। সেই কারণে কলকাতার বিভিন্ন ওষুধের দোকানো অভিযান চালাবে পুলিশ।
বাগরি মার্কেট ও মেহতা বিল্ডিংয়ের ওষুধের দোকান ও গোডাউনেও হানা হতে শুরু করেছে। ওষুধের কালোবাজারিতেও ইবি আইনি ব্যবস্থা নেবে। এই সময় সার্জিক্যাল মাস্ক মজুত করেও বেশি দামে বিক্রির প্রবণতা থাকে কিছু ব্যবসায়ীর। আবার বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় স্যানিটাইজার, বিশেষ কয়েকটি ব্র্যান্ডের সাবান ও জীবানুনাশক তরল। অভিযান চালানোর সময় এই বস্তুগুলির কালোবাজারিও যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদি হাসপাতাল অক্সিজেন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ০৩৩২২৫০৫০৯৬ অথবা ০৩৩২২১৪৩৬৪৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।