দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছে এই মারণ ভাইরাস। প্রতিদিন ঝড়ের গতিতে বাড়ছে দেশের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন নজির গড়েছে ভারত। বুধবার সকালেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে নতুন করে করোনার কবলে ২ লক্ষ ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ! দৈনিক মৃত্যুও ২০০০ ছাড়িয়েছে৷ কিন্তু এই পরিস্থিতিতে করোনার সঙ্গে লড়াই করার একমাত্র অস্ত্র টিকার জোগানে টান। কারণ রাজ্যকে পর্যাপ্ত টিকা পাঠাচ্ছে না মোদী সরকার উদ্বেগ বাড়িয়ে টিকাকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলার পরিবার কল্যাণ আধিকারিক বলছেন, ‘আরও ভ্যাকসিন প্রয়োজন। কিন্তু তা কবে আসবে তা নিয়ে কিচ্ছু জানায়নি দিল্লী।’ ফলে আমজনতাকে দ্রুত বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে টিকা নিতে এসেছিলেন সাতশো জন। কিন্তু মাত্র আড়াইশো জনকে টিকা দিয়েই বন্ধ করে দিতে হয় প্রক্রিয়া। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আবার পরের দিন টিকাকরণ হবে। মঙ্গলবার এনআরএস হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে কয়েকশো লোকের লম্বা লাইন পড়ে। কিন্তু চড়া রোদের মধ্যেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে শেষমেশ ফিরে যেতে হয় অনেককেই। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টোর থেকে হাসপাতালে ভ্যাকসিন এসেছে দুপুর সাড়ে বারোটার পর। ভ্যাকসিন আসার পরেই আড়াইশো জনকে টোকেন দিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিন পাননি আজ বুধবার তাঁদের টিকা দেওয়া হবে।
শুধু নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ নয়, ভ্যাকসিন নিয়ে এই হাহাকার জেলার হাসপাতালগুলিতেও। বারাসাত ১ নম্বর ব্লকের ছোট জাগুলিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও সকাল ন’টা থেকে টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শেষমেশ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তিনশোজন। ভ্যাকসিন ভোগান্তি প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগণা স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, সরবরাহ অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের কার্সিয়াং মহকুমা হাসপাতালেও টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ৪০০ জন। কিন্তু ভ্যাকসিন পেয়েছেন অর্ধেকেরও কম। উল্লেখ্য, ১ মে থেকে ১৮ ঊর্ধ্বদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই যদি জোগানের অবস্থা হয়, সে সময় কী করে সামাল দেবে স্বাস্থ্যদপ্তর? কারণ দিল্লী থেকে পাঠানো যৎসামান্য যে পরিমাণ টিকা মজুত রয়েছে বাংলার ভাঁড়ারে, তা দিয়ে জোরকদমে টিকাকরণ কোনওমতেই সম্ভব নয়।